পাত সংস্থান তত্ত্ব// PLATE TECTONIC THEORY//Bsc,Msc,WBCHSE class 11
পাত সংস্থান তত্ত্ব
ভূমিকাঃ সমুদ্রবক্ষের বিস্তার ও পুরাচুম্বকীয় তত্ত্বের উপর নির্ভর করে ১৯৬০ দশকের পরবর্তি সময়ে ভু- পদার্থবিদ ও ভুমিরুপবিদগণ যেসব ধারণা দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম তত্ত্ব হল পাতসংস্থান তত্ত্ব। পৃথিবীর ভূমিরূপ অর্থাৎ পর্বত, মালভূমি, মহাদেশ, সমুদ্র তলদেশের বিস্তৃতি, অগ্নুৎপাত প্রভৃতির গঠন সংক্রান্ত যে মতবাদ বিজ্ঞানী মহলে প্রচলিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা হলো পাত সংস্থান তত্ত্ব। এই তথ্যটির বৈজ্ঞানিক সত্যতা থাকার জন্য বিজ্ঞানী মহলে এক আলোড়নের সৃষ্টি করে।
ইংরেজি পারিভাষিক নাম Tectonic plate-এর tectonic শব্দটি লাতিন ভাষা tectonicus হয়ে গ্রিক ভাষার গ্রিক: τεκτονικός ("গড়ার গুণসম্পন্ন") শব্দটি থেকে এসেছে
পাত সংস্থান তত্ত্বের ইতিহাস
১৯৬৫ সালে কানাডার ভূপদার্থবিদ জন টুজো উইলসন 'নেচার' পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর এক গবেষনামূলক প্রবন্ধে সর্বপ্রথম 'পাত' শব্দটি ব্যবহার করেন এবং পাত সংস্থান সম্পর্কে ধারনা প্রদান করেন। এরপর, ১৯৬৭ সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম জেসন মরগ্যান ও জেভিয়ার লে পিঁচো পাতের চলন সম্পর্কে বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীকালে ম্যাকেঞ্জি, পার্কার, আইজ্যাকস্, অলিভার, সাইকস্ প্রমুখ বিজ্ঞানীদের মৌলিক গবেষণা দ্বারা পাত সংস্থান তত্ত্ব সমৃদ্ধ হয়।
পাতের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
সংজ্ঞা
পৃথিবীর ভূত্বক (সিয়াল + সিমা) মহাদেশ ও মহাসাগরীয় তলে আপেক্ষিকভাবে সঞ্চরণশীল কতকগুলি ছোটো বড়ো কঠিন খন্ডে বিভক্ত। এই খন্ডগুলিকে পাত (Plate) বলা হয়। এইপাতগুলির গঠন ও চলনের সাহায্যে যে তত্ত্বের মাধ্যমে পৃথিবীর বিবিধ ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ও ভূমিরূপ উদ্ভব প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়, তাকে পাত সংস্থান তত্ত্ব বলে।।
বৈশিষ্ট্য
১. ভূত্বকীয় অংশ:
পাতগুলি মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় এই দুই ভাগে বিভক্ত।
২.বেধ:
পাতগুলির গভীরতা সমান নয়।মহাসাগরীয় পাতের গড় গভীরতা প্রায় 70 কিমি।কিন্তু মহাদেশীয় পাতের গড় গভীরতা প্রায় 150 কিমি।
৩.আয়তন:
পাতসমূহের বিস্তার বা আয়তন প্রায় 1 লক্ষ বর্গ কিমি থেকে প্রায় 100 কোটি বর্গকিমি পর্যন্ত হতে পারে,
এজন্য পাত গুলি বড়-মাঝারি-ছোট হয়।
৪.বিস্তার:
পাতগুলি মহাদেশ ও সমুদ্রের উভয়ের অংশ,
অথবা শুধু মহাদেশ বা শুধু মহাসাগর নিয়ে গঠিত।
৫.গতিবেগ:
পাতগুলি স্থির নয়।সর্বদা সঞ্চরণশীল।ভিন্ন ভিন্ন গতিবেগে পাতগুলি পরস্পরের দিকে বা বিপরীতে অগ্রসর হয়।
৬.প্রান্তভাগের প্রকৃতি:
চলমান পাতের দুটি সীমানা থাকে।
তত্ত্বের মূলকথাঃ-
পৃথিবীর কঠিন উপরিভাগ অর্থাৎ ভূত্বক অনেকগুলি ছোটো বড়ো পাত দ্বারা গঠিত রয়েছে। সাধারনত এই পাতগুলির আয়তন ১০ লক্ষ থেকে ১০ কোটি বর্গ কিমি এবং গভীরতা ৭০ থেকে ১৫০ কিমি পর্যন্ত হয়। এইসব পাতগুলি সমগ্র শিলামন্ডল দ্বারা গঠিত এবং গুরুমন্ডলের ওপরের অংশ ক্ষুব্ধমন্ডল (Asthenosphere) -এর ওপর সঞ্চরণশীল। ক্ষুব্ধমন্ডলের পরিচলন স্রোতের প্রভাবে পাতসমূহ চলমান বা গতিশীল অবস্থায় রয়েছে। দুটি পাতের মধ্যবর্তী অঞ্চল অর্থাৎ পাত সীমানা বরাবর ভূমিকম্প, অগ্ন্যূৎপাত, ভঙ্গিল পর্বত উত্থান, সামুদ্রিক শৈলশিরা সৃষ্টি প্রভৃতি ভূতাত্ত্বিক ঘটনা দেখা যায়।
পাতের প্রকারভেদঃ
পাত সংস্থান অনুসারে ৭ টি বৃহৎ পাত , ৮ টি মাঝারি পাত এবং ২০ টির বেশী ক্ষুদ্র পাতের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়।
বৃহৎপাত
ইউরেশীয় পাতঃ ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তরাংশে সন্নিহিত সামুদ্রিক তলদেশ নিয়ে গঠিত হয়েছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত ঃ প্রশান্ত মহাসাগরের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।
আফ্রিকা পাত ঃ আফ্রিকা মহাদেশ ও তার সন্নিহিত ভারত ও আটলান্টিক মহাসাগরের অংশ নিয়ে তৈরি
ইন্দো – অস্ট্রেলিয়ান পাতঃ অস্ট্রেলিয়ার চারপাশে সাগর ও ভারত মহাসাগরের কিছুটা অংশ নিয়ে গঠিত
উত্তর আমেরিকাঃ উত্তর আমেরিকা মহাদেশ ও সন্নিহিত উত্তর আটলান্টিকের পশ্চিম দিক নিয়ে গঠিত
দক্ষিণ আমেরিকা পাতঃ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ ও সন্নিহিত দক্ষিণ আটলান্টিকের পশ্চিম দিক নিয়ে গঠিত
অ্যান্টার্কটিকা পাতঃ অ্যান্টার্কটিকা স্থলভূমি এবং তার চারপাশের সমুদ্র নিয়ে গঠিত
মাঝারি পাতসমূহ
আরবিয় পাত
নাজকা পাত
জুয়ান-দ্য-ফুকা পাত
ককস পাত
ফিলিপাইন পাত
ক্যারিবিয়ান পাত
ভারতীয় পাত
স্কোশিয়া পাত
ক্ষুদ্র পাত সমূহ
পানামা পাত,
সোমালি পাত
অ্যাড্রিইয়াটিক পাত ,
আনাতলিয়া পাত ,
মাদাগাস্কার পাত ,
ইয়াংসি পাত ,
ইরানীয় পাত ,
বার্মা পাত ,
টোঙ্গা পাত ,
গ্যালাপাগোস পাত ,
গ্রিনল্যান্ড পাত ,
শ্রীলঙ্কা পাত ,
ফিজি পাত ইত্যাদি
পাতসংস্থানের কারণ সমূহ
১। অভিকর্ষজ টানের প্রভাব
২। পরিচলন স্রোত
৩। ম্যাগমার উদ্ধমুখী চলন
৪। উষ্ণস্থানের প্রভাব
৫। নিমজ্জিত পাতের টান
দুটি পাতের পারস্পরিক সংযোগস্থলকে পাত সীমানা এবং পাতের প্রান্তীয় অঞ্চলকে পাত প্রান্ত বলে ।
বিভিন্ন প্রকার পাতসীমা ( Different Types of Plate Boundary ):
প্রতিসারী / অপসারি/ গঠনকারী পাত সীমানা ( Divergent Plate Boundary)
অভিসারী/ বিনাশকারী পাত সীমানা ( Converging Plate Boundary)
প্রতিগামী/ সংরক্ষণশীল / ট্রান্সফর্ম / নিরপেক্ষ পাত সীমানা ( Transform Plate Boundary)
প্রতিসারী / অপসারি/ গঠনকারী পাত সীমানা ( Divergent Plate Boundary)
যখন দুটি পাত স্থানচ্যুত হয়ে পরস্পরের বিপরীত দিকে দূরে চলে যায় তখন তাকে প্রতিসারী পাত সীমানা বলে। পাতের এইরূপ চলনের কারণ হিসেবে ভূ-অভ্যন্তরস্থ পরিচলন স্রোত এর প্রধান কারণ পরিচলন স্রোত উর্ধগামী হয়ে পাতকে বিপরীত দিকে চালিত করে।প্রতিসারী পাত সীমানায় নতুন ভূতত্ত্ব গঠিত হওয়ায় একে গঠনকারী পাত সীমানা বলে।
উদাহরণঃ আটলান্টিক মহাসাগরে মধ্যসামুদ্রিক শৈলশিলার দুই দিকে পাতের চলন
বৈশিষ্ট্য:
(i) যেহেতু দুটি পাতের পরস্পরের বিপরীত মুখী গামী হয় বা চলন হয় তাই এর মধ্যবর্তী ভূমিভাগের কোনো বিকাশ হয় না। আর্থার হোমস এর মতে এই পরিস্থিতিকে Opening Thethis বলে।
(ii) মধ্যবর্তী চ্যুতি অংশে ক্রমশ ফাটল বৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ লাভা বাইরে বেরিয়ে আসে এবং নতুন ভূমি সৃষ্টি করে যা মধ্য শৈলশিরা রূপে দেখতে পাই।
(iii) এই পাত সীমান্তকে গঠনকারী পাত সীমান্ত বলে কারণ এখানে মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা চ্যুতি উপত্যকা বা স্তূপ পর্বত গঠন হতে দেখা যায়।
উদ্ভূত ভূমিরূপ
মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা
সমুদ্র তলদেশে প্রতিসারী পাত সীমানা বরাবর দুটি পাত বিপরীত দিকে সরে গেলে মাঝের ফাটলের মধ্য দিয়ে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের ব্যাসল্ট জাতীয় ম্যাগমা নির্গত ও সঞ্চিত হয়ে নতুন কঠিন সামুদ্রিক ভূত্বক ও জলে নিমজ্জিত মধ্য সামুদ্রিক শৈলশিরা সৃষ্টি হয়।
সমুদ্রবক্ষের বিস্তৃতি ঘটে।যেমন ~ ইংরেজি অক্ষর 'S' আকৃতির মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বিশ্বে দীর্ঘতম।মহাসাগর তলদেশে সামুদ্রিক শৈলশিরার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় 64,000 কিমি,এর প্রস্থ~2000-2400 কিমি,এবং উচ্চতা-3700 মিটার পর্যন্ত হয়।
গ্রস্থ উপত্যকা –
পরিচলন স্রোত ঊর্ধ্বগামী হয়ে বিপরীতে দিকে চললে দুটি মহাদেশীয় পাতকে বিপরীত দিকে চালিত করে। এরপর দুটি মহাদেশীয় পাতের পরস্পর বিপরীত দিকে চলনের ফলে যে ফাটল বা চ্যুতি সৃষ্টি হয় তা দীর্ঘায়িত হয়ে গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি করে। উদাহরণ স্বরূপ আফ্রিকার পূর্ব-উপকূলস্থ উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত গ্রস্থ উপত্যকার কথা বলা যায়।
অভিসারী/ বিনাশকারী পাত সীমানা ( Converging Plate Boundary)
দুই বিপরীত দিক হতে পরস্পর মুখোমুখি দুটি পাত যখন পরস্পরের দিকে গতিশীল হয় তখন তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে।
বৈশিষ্ট্য( Characteristics ): ..
(i) পরস্পর অভিমুখে আগত পাত দুটির মধ্যে একটি যদি মহাসাগরীয় পাত হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই মহাদেশীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে।
(ii) মহাসাগরীয় বা মহাদেশীয় পাত পরস্পরের সংস্পর্শের জন্য পূর্ববর্তী ভূমিভাগের বিলুপ্তি হয়।
(iii) যে পাতটি বেঁকে ভূগর্ভস্থ Asthenosphere পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং উত্তপ্ত সান্দ্র পদার্থ প্রবেশ করে তার ঠিক উপরে অগ্ন্যুদগম ভূমিরূপ গড়ে তোলে।
(iv) দুটি পাতের মিলনের ফলে যে পাতটি বেঁকে অন্যপাতের নিচে অবস্থান করে সেই বক্রপাতযুক্ত ভূমিকম্প প্রবণ ঢালু প্লেটের সীমানাতলকে বেনীঅফ জোন বা Benioff Zone বলে। এই বেনীঅফ জোন ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে 30 ডিগ্রি থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে। তবে সাধারণত 45 ডিগ্রীর কাছাকাছি এই মন্ডল থাকে।
মহাদেশ – মহাদেশ অভিসারী প্লেট সীমান্ত:
এক্ষেত্রে দুটি মহাদেশীয় পাত পরস্পর সম্মূখীন হয়ে থাকে। দুটি পাতের মধ্যে তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট পুরু পাত সংঘর্ষের ফলে স্বল্পপুরু পাতের নীচে ঢালিত হয়ে থাকে। ফলে মহাদেশ – মহাদেশ অভিসারী প্লেট সীমান্ত সৃষ্টি হয়।
উদ্ভুত ভূমিরূপ: ভঙ্গিলপর্বত মালা ও মহা অধভঙ্গ গঠন – সাধারণত দুটি মহাদেশীয় পাতের অবনমিত অঞ্চলে মহাঅধঃভঙ্গ গঠিত হয়। এখানে অগভীর সমুদ্র অবস্থান করে। এই সমুদ্রে হাজার হাজার ফুট পলিস্তর সঞ্চিত হয়। দুটি মহাদেশীয় পাত যখন পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় তখন মধ্যবর্তী পলিস্তরে প্রচন্ড চাপ দেয় ফলে পলিস্তরে ভাঁজ পড়ে ও উথিত হয়। মধ্যের পলি রাশি ভাঁজ খেয়ে উপরে উঠার ফলে দুটি মহাদেশীয় পাত ভঙ্গিল পর্বতমালার দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত হয়। যে পাতটি যথেষ্ট পুরু তা স্বল্প পুরু পাতের নীচে চালিত হয়।
মহাসমুদ্র – মহাদেশ অভিসারী পাত সীমানা:
এই ধরনের সীমানা মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় পাতের সংযোগস্থলে পরস্পর আসা পথের সংযোগে হয়ে থাকে। এখানে মহাসাগরীয় প্লেট অপেক্ষাকৃত ভারী শিলা দ্বারা গঠিত বলে এটা মহাদেশীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে। প্রকৃতপক্ষে দুটি পাতের মধ্যে মহাসাগরীয় পাতটি বেঁকে ভূগর্ভস্থ Asthenosphere এর উত্তপ্ত পদার্থের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ঐ সকল লাভাজাত পদার্থের সঙ্গে মিশে যায়। দুটি পাতের মিলনস্থলে এক সমুদ্রখাতের সৃষ্টি হয়। যেখানে সামুদ্রিক পাত মহাদেশীয় পাতের নিচে নেমে যাচ্ছে তাকে অধঃপাত মন্ডল বা Subduction Zone বলে।
উদ্ভূত ভূমিরূপ: ভঙ্গিল পর্বতমালা – মহাসাগরীয় পাত প্রান্তে সমুদ্রখাতের সৃষ্টি হয়। সমুদ্রখাতে পলি সঞ্চিত হয়। পাতের চলন আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে সমুদ্র খাতে সঞ্চিত পলিরাশিতে ভাঁজ পড়ে ও ওই ভাঁজ বৃদ্ধি পেলে ভঙ্গিল পর্বতমালার সৃষ্টি হয়। এরই অনুগামী ঘটনা হিসেবে থাকে চ্যুতি ও ব্যাসল্ট এবং অ্যান্ডিসাইট জাতীয় লাভার নিঃসরণ হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতটি দক্ষিণ আমেরিকা পাতের নিচে চলে যাওয়ার ফলে আন্দিজ পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে।
মহাসমুদ্র – মহাসমুদ্র অভিসারী পাত সীমান্ত: যখন দুটি মহা সামুদ্রিক প্লেট পরস্পর মুখী হয় তখন সংঘর্ষের ফলে একটি অপরটির নিচে নিমজ্জিত হয়। এর ফলে ওই অংশ থেকে লাভা প্রবাহিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের উপরে বা নীচে সঞ্চিত হয়ে হয়ে আগ্নেয়দ্বীপশিলার উৎপত্তি ঘটে।
উদ্ভূত ভূমিরূপ: আগ্নেয় দ্বীপমালা – যদি দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পরের সম্মুখীন হয় তাহলে সংস্পর্শের ফলে একটি অপরটির নিচে নিমজ্জিত হয় এবং নিমজ্জমান অংশ হতে লাভা প্রবাহিত হয়ে ভূপৃষ্ঠ উপরে বা নিচে সঞ্চিত হয়ে সৃষ্টি হয়ে আগ্নেয় দ্বীপ মালার সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ প্রশান্ত মহাসাগরের অ্যালুউশিয়াল দ্বীপপুঞ্জ এবং জাপান ও ফরমোসা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সৃষ্ট দ্বীপ মালা উল্লেখযোগ্য।
সংরক্ষনশীল বা প্রতিগামী পাত সীমান্ত ( Transform Plate Boundary ):
দুটি পাত পরস্পরের পাশাপাশি বিপরীত দিকে চলমান হয় তখন একে অপরের সঙ্গে বিনা সংঘর্ষে নিজেদের মধ্যে পাশাপাশি স্থান পরিবর্তন করে বিপরীত দিকে চলতে থাকে, এরকম পাত সীমানাকে সংরক্ষনশীল বা প্রতিগামী পাত সীমান্ত বা Transform Plate Boundary বলা হয়।
এই পাত সীমায় প্রশমিত সক্রিয়তার ফলে কোন নতুন পাত সৃষ্টি হয় না আবার কোন পাতের বা ভূ-ত্বকের ধ্বংস হয় না। কারণ পাশ্ববর্তী পাতগুলি পরস্পর সংঘর্ষ ও বিপরিতমুখী না হওয়ার জন্য এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
ত্রিপাত সম্মিলন
“ Y” আকৃতির এই পাত সীমানায় তিনটি পাত একত্রে মিলিত হয় তাকে ত্রিপাত সম্মিলন বলে। নাজকা , প্রশান্ত এবং অ্যান্টার্কটিকা সংযোগস্থলে ত্রিপাত সম্মিলন গড়ে উঠেছে। এইটি মূলত অপসারী পাত সীমানায় হয়ে থাকে।
সমালোচনাঃ- পাত সংস্থান তত্ত্বের প্রধান সমালোচনা গুলি হল –
(১) প্রাথমিকভাবে পাতগুলির চলনের গতি কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা করা হয়নি।
(২) পাতের চলনের জন্য প্রয়োজনীয় বল বা শক্তিগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও গ্রহনযোগ্যতা নেই।
(৩) অনেক স্থানে অধঃপাত মন্ডল সেভাবে দেখা যায়না।
(৪) সামুদ্রিক শৈলশিরা ও অধঃপাত মন্ডলের দৈর্ঘ্যের অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।
উপরোক্ত সমালোচনা সত্ত্বেও, পাত সংস্থান তত্ত্ব বর্তমানে প্রমাণিত সত্য। এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই পাতের গঠন ও চলনের ফলে বিবিধ ভূতাত্ত্বিক ঘটনা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা যায়, এই বিষয়ে আরও উন্নত গবেষণা দ্বারা পাত সংস্থান তত্ত্ব আরও সমৃদ্ধ হবে।
THANK YOU FOR VISITING THIS PAGE
Sayantani singh
0 Comments