Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল ( WB HS GEOGRAPHY) কৃষিকাজ

 

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল ( WB HS GEOGRAPHY) 

কৃষিকাজ

নমস্কার ,  উচ্চমাধ্যমিক ভূগোল ( WB HS GEOGRAPHY): সকল ছাত্র ও  ছাত্রীকে  জিওগাফিয়াতে স্বাগতম। আজকে এই ব্লগে আমি মূলত তোমাদের পঞ্চম অধ্যায়ের বায়ুমণ্ডলীয় গোলযোগ থেকে কিছু পার্থক্য যা ২০২১ সালের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন। আশা করি তোমাদের সাহায্য হবে। সাজেশনভিত্তিক প্রশ্ন যা তোমাদের অবশ্যই কাজে আসবে। 



ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্প উন্নতি লাভ করেছে কেন?


☞কার্পাস বয়ন শিল্প হল ভারতের একক বৃহত্তম শিল্প। বিশুদ্ধ কাঁচামাল নির্ভর শিল্প হওয়ায় বাজার বা কাঁচামালের উৎস অঞ্চল অথবা এই দুই এর মধ্যবর্তী যে কোন অঞ্চলে এই শিল্প গড়ে ওঠে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই নিয়মটি ছাড়াও আরো কতগুলো বিশেষ কারণে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষত মুম্বাই ও আমেদাবাদে কার্পাস বয়ন শিল্পের এক দেশী ভবন ঘটেছে। নিম্নে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির কারণ গুলি আলোচনা করা হল-

  • ১)কাঁচামালের সহজলভ্যতা:- মহারাষ্ট্রের ডেকান ট্রাপ ও গুজরাটের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কার্পাস বা  কাঁচা তুলো প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয় এবং নিকটবর্তী কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলিতে সহজেই সরবরাহ করা যায়।ফলে এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব হয় না।
  • ২)আর্দ্র জলবায়:- আরব সাগরের অনতি দূরে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির,  যা এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক।কারণ আর্দ্র জলবায়ুতে সুতো ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • ৩)রাসায়নিক দ্রব্যের সহজলভ্যতা:- সুতো পরিষ্কার করা ও রং পাকা করার জন্য কার্পাস বয়ন শিল্পে যে ব্লিচিং পাউডার, কস্টিক সোডা ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয় তা এখানকার মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদারা, মিঠাপুর ইত্যাদি স্থানের রাসায়নিক শিল্প কারখানাগুলি থেকে সহজে পাওয়া যায়।
  • ৪)পরিশ্রুত জলের যোগান:- কার্পাস বয়ন শিল্পে সুতো পরিষ্কার করা, বস্ত্র রং করা, ব্লিচ করা ইত্যাদি কাজের জন্য যে প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রুত জলের প্রয়োজন হয় তা এখানকার সবরমতী, মাহি ইত্যাদি নদী থেকে সহজে পাওয়া যায়।
  • ৫)শক্তি সম্পদের যোগান:- কার্পাস বয়ন শিল্পে যে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তা এখানকার ভিরা, ভীবপুরী, খোপালি, কয়না  ইত্যাদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তারাপুর ও কাকড়াপাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
  • ৬)উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা:- ভারতের পশ্চিমাঞ্চল উন্নত সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত। ফলে এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আনয়ন এবং উৎপাদিত কার্পাস বস্ত্র বাজারে প্রেরণের সুবিধা হয়েছে।
  • ৭)বন্দরে সান্নিধ্য:- মুম্বাই, কান্ডালা, সুরাট, নভসেবা  ইত্যাদি বন্দর গুলি পশ্চিম ভারতে অবস্থিত হওয়ায় একদিকে যেমন কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি সহ অন্যান্য উপকরণ আমদানির সুবিধা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি উৎপাদিত কার্পাস বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি সুবিধা হয়েছে।
  • ৮)সুলভ শ্রমিক:- কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক এখানকার সাতারা, শোলাপুর, সুরাট প্রভৃতি জনবহুল অঞ্চল গুলি থেকে সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়।
  • ৯)মূলধনের প্রাচুর্য্য:- ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন এখানকার স্থানীয় গুজরাটি, মারাঠি, পারসি, ভাটিয়া ইত্যাদি সম্প্রদায়ের ধনী শিল্পপতিগণ এবং বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে।
  • ১০) চাহিদা:মুম্বাই,আমেদাবাদ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলের বিপুল জনসংখ্যার বিশাল কার্পাস বস্ত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য কার্পাস বয়ন শিল্পের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশের বাজারেও এখানকার কার্পাস বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা আছে। দেশে-বিদেশে কার্পাস বস্ত্রের এই বিপুল চাহিদা ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতি কে ত্বরান্বিত করেছে।
আরো পড়ুন


ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যাগুলি আলোচনা করো।কার্পাস বয়ন শিল্প হলো ভারতের একটি অতি প্রাচীন শিল্প। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বিদেশি মুদ্রা অর্জন সহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্প বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। নিম্নে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সেই সমস্যা গুলো আলোচনা করা হলো-

১)কাঁচামাল বন্টনের সীমাবদ্ধতা ও মূল্য বৃদ্ধি:- ভারতের সর্বত্র কার্পাস চাষ হয় না। তাই বিদেশ থেকে ভারতকে কার্পাস তুলা আমদানি করতে হয়। আবার এদেশে যে অল্প পরিমাণে কার্পাস চাষ হয় তারও  মূল্য দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরুপ কার্পাস বস্ত্র উৎপাদনে ব্যয় বেশি হচ্ছে।

২)পুরানো যন্ত্রপাতির ব্যবহার:-ভারতের অধিকাংশ কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রে এখনো পুরানো ও বাতিল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। এর ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে তেমনি কার্পাস বস্ত্রের উৎকর্ষতা কমে।
৩)অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ:-বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহ  অন্যান্য শিল্পের  ন্যায়  ভারতের কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পেরও একটি গুরুতর সমস্যা। মাঝে মধ্যেই এদেশের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।

৪)কৃত্রিম তন্তুর সঙ্গে প্রতিযোগিতা:-বর্তমানে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির ফলে রেয়ন, নাইলন, পলিয়েস্টার, টেরিলিন  ইত্যাদি সুলভ ও টেকসই  তন্তুর যোগান বৃদ্ধি পেয়েছে।এই ধরনের কৃত্রিম তন্তুজাত বস্ত্রের গুণগত মান ভালো হওয়ায় এবং দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় কার্পাস বস্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পেয়েছে।

৫)আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা:-আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভারতকে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের উৎপাদিত উৎকৃষ্টমানের ও সুলভ মূল্যের কার্পাস বস্ত্রের  সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। এর ফলে  বিশ্ববাজারে ভারতের কার্পাস বস্ত্রের  চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।

৬)উৎকৃষ্ট কাঁচামালের অভাব:-কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো কাঁচা তুলো বা কার্পাস। ভারতে উৎপাদিত কার্পাস প্রধানত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আঁশ  বিশিষ্ট। এছাড়া এ দেশের চাহিদার তুলনায় কার্পাস উৎপাদনের পরিমাণও বেশ কম। তাই কাঁচামালের অভাবে এ দেশের কার্পাস বয়ন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে।

৭)শ্রমিক অসন্তোষ:-ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পকে শ্রমিক অসন্তোষ সমস্যা জর্জরিত করে রেখেছে। ধর্মঘট, লকআউট,কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি এদেশের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলির নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায়  মাঝে মধ্যেই কার্পাস বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

৮)অন্যান্য সমস্যা:-উপরিল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, সুদক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার অভাব,  কার্পাস বস্ত্র পর সরকারের শুল্ক বৃদ্ধি,  রুগ্ন শিল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি,  শিব অতীতের মূলধন বিনিয়োগ অনীহা ইত্যাদি বিষয়গুলো ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।


জিওগ্রাফিয়া✍️


Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code