পর্যটনের নিয়ন্ত্রক (Factors influencing growth in tourism)
পর্যটনের নিয়ন্ত্রক (Factors influencing growth in tourism): ‘Tourism’ কথাটির বাংলা আক্ষরিক অর্থ ‘পর্যটন' বা ‘পর্যটন ব্যবস্থা'। পর্যটন শিল্প ও পর্যটন ব্যবস্থা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা এমন এক বিষয়.
যা মানুষের চিত্তবিনোদন, অবসর যাপন ও অন্যান্য বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পর্য ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী বিষয়গুলি বৈচিত্রময় ও স্থান, কাল ও পাত্র পরিবর্তনশীল। ১৯৭৬ সালে এইচ রবিনসন (H. Robinson) তার লেখা 'Geography of Tourism' শীর্ষক পুস্তকে পর্যটনের ভৌগলিক উপাদানগুলিকে কতগুলি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন, যা রবিনসন দ্বারা বর্ণি পর্যটনের ভৌগলিক উপাদান সমূহ (Geographical parameters of tourism by Robinson) নামে পরিচিত। এগুলি নিম্নরূপ
১। গম্যতা এবং অবস্থান (Accessibility and location)
২। দেশ (Space)
৩। দৃশ্যাবলী (Scenery)
ক) ভূদৃশ্যাবলী (Landforms): পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা, পার্বত্য খাড়া চাল, আগ্নেয়গিরি, প্রবাল প্রাচীর ইত্যাদি।
খ) জল (Water): নদ, নদী, হ্রদ, জলপ্রপাত, গিজার, হিমবাহ, সমুদ্র ইত্যাদি।
গ) উদ্ভিদ (Vegetation): বনভূমি, তৃণভূমি, স্বাস্থ্যকর উদ্ভিদাঞ্চল, মরুভূমি ইত্যাদি।
৪। জলবায়ু (Climate): রোদ, মেঘ, তাপমাত্রা পরিস্থিতি, বৃষ্টি এবং তুষারপাত।
৫। পশু পাখিদের জীবন (Animal Life):
ক) বন্য জীবন (Wild life): পাখি, খেলা সংরক্ষণ, চিড়িয়াখানার পশুর জীবন।
খ) শিকার করা, মাছ ধরা ইত্যাদি।
৬। জনবসতির বৈশিষ্ট্যগুলি (Settiment features): ক) শহর, নগর, গ্রাম।
খ) ঐতিহাসিক অবশেষ ও স্মৃতিস্তম্ভ।
গ) প্রত্নতাত্বিক অবশেষ।
৭। সংস্কৃতি (Culture): লোক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, লোককাহিনি, শিল্প ও কারুশিল্প ইত্যাদি।
তবে সামগ্রিকতার ভিত্তিতে বলা যায় যে পর্যটন ব্যবস্থা নিম্নলিখিত ছয়টি বিষয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলি হল
ক) পরিবেশগত নিয়ন্ত্রক (Environmental Factors)।
খ) আর্থসামাজিক নিয়ন্ত্রক (Socio Economic Factors)।
গ) ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রক (Historical and Cultural Factors) নিয়ন্ত্রক
ঘ) ধর্মীয় নিয়ন্ত্রক (Religious Factors)।
3) অন্যান্য নিয়ন্ত্রক (Other Factors)।
চ) প্রেরণাগত নিয়ন্ত্রক (Motivation Factors)।
এই বিষয়গুলি যে শুধুমাত্র পর্যটন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে এমনটা নয়, এটি ভ্রমণ ব্যবস্থার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলির বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ:
ক) পরিবেশগত নিয়ন্ত্রক (Environmental Factors):
মনোরম স্বাচ্ছন্দ্য পূর্ণ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণটি সাধারণত দুটি কারণের উপর ভিত্তি করে আলোচনা করা হয়। ১। মনোরম জলবায়ু ( Pleasant Climate): মনোরম জলবায়ু পর্যটকদের আকর্ষণের মূল বিষয়। নাতিশীতোষ্ণ ও শীতল জলবায়ু অঞ্চলের অধিক উষ্ণ নয়, এমন স্নিগ্ধ পরিবেশ ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার মনোরম অবস্থা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী পর্যটন কেন্দ্রগুলি উষ্ণ সামুদ্রিক উপকূলে গড়ে উঠেছে। অপরপক্ষে উষ্ণ অঞ্চলের মানুষেরা শীতল অঞ্চলে স্নিগ্ধ পরিবেশে ভ্রমণে যেতে চায়। ভারতবর্ষে মুম্বাইয়ের কাছে মহাবালেশ্বর, কুলু ও মানালি, শিলং, কাশ্মীর, লোনাভলা শীতল শান্ত স্নিগ্ধ জলবায়ুর জন্য বিখ্যাত, যার ফলে এই অঞ্চলগুলি ভারতের পর্যটনের মূল কেন্দ্ররূপে পরিচিতি লাভ করেছে। একইভাবে উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের মানুষরা সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ইত্যাদি স্থানে এই একই কারণে ভ্রমণ করতে যায়।
২। নিসর্গ (Natural Beauty): মানুষ সাধারণত সামান্য চড়ুইভাতি যাবার সময়েও সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পর্যটনের ক্ষেত্রে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত-এর নির্দিষ্ট স্থান, দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, মিষ্টিজলের হ্রদ, জলপ্রপাত ইত্যাদি বিষয়গুলি সুন্দর ভূদৃশ্য সৃষ্টি করে। এই অবস্থাগুলি ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করে।
খ) আর্থসামাজিক নিয়ন্ত্রক (Socio Economic Factors): অর্থসামাজিক পরিবেশের যে বিষয়গুলি পর্যটনকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলি হল ১। গম্যতা (Accessibility); গম্যতা বিষয়টি সহজে কোনো স্থানে পৌঁছানোকে বোঝায়। এটি পরিবহণের বিভিন্ন মাধ্যম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবহণের প্রধান তিনটি মাধ্যম— জলপথ, সড়কপথ ও আকাশপথ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে পৃথক পৃথক গুরুত্বপূর্ণতা পেয়েছে। দ্বীপীয় অঞ্চলের পর্যটনে জলপথ, পার্বত্য অঞ্চলে আকাশপথ ও অবন্দুর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে রেলপথ ও সড়কপথের গম্যতা বেশি। তবে, যে অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য যে পরিবহণের মাধ্যমটি যত বেশি গম্যতা প্রদান করে, সেখানে সেটির গুরুত্ব অধিক, যেমন আসামের গৌহাটি থেকে শিলং যাওয়ার ক্ষেত্রে সড়কপথ পরিবহণের গুরুত্বের কথা বলা যায়। অনেক সময়ে, পরিবেশের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে জলপথ ও আকাশপথ ব্যতিরেকে পর্যটকেরা সড়কপথ ও রেলপথকে অনেকবেশি উপভোগ্য মনে করেন। কিছু পর্যটন ব্যবস্থা জলপথের পরিবহণের মাধ্যমগুলিকে বেছে নেয় শুধুমাত্র বিলাসিতার সাথে সমুদ্রভ্রমণ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে, যেমন কলকাতা থেকে আন্দামান যাওয়ার ক্ষেত্রে সমুদ্রপথকে বেছে নেওয়ার কথা বলা যায়।
২। উপযোজন (Accommodation): পর্যটকরা সেই স্থানে ভ্রমণ করতে ইচ্ছে প্রকাশ করে যেখানে তারা খুব সহজে উপযোজিত করতে পারে। এক্ষেত্রে পর্যটকরা সুন্দর রিসর্ট, ক্যাটারিং ব্যবস্থা দ্বারা আকর্ষিত হয়। মানুষের একটি বিশেষ প্রবণতা হল সঠিক অর্থের বিনিময়ে সঠিক স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করা। এই কারণেই সঠিক ব্যবস্থা সম্পন্ন পর্যটন কেন্দ্রে মানুষ যেতে পছন্দ করে। যে পর্যটন কেন্দ্র অনেক সুন্দর তবে সেখানে পৌঁছানো অনেক অসুবিধাজনক, সেই স্থানে পর্যটকদের ভিড় কম। যেমন- লে-লাডাক পৌঁছানো অনেক অসুবিধাজনক তাই সেখানে অনেক স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হোটেল রিসর্ট থাকা সত্ত্বেও পর্যটকদের ভিড় খুব কম। যে পর্যটন গন্তব্যে পর্যটকদের উপযোজনের খরচ বেশি (হোটেল ভাড়া, গাড়ি ভাড়া, খাবারের দাম, জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি) সেখানে মানুষের যাওয়ার প্রবণতাও কম, এই কারণে ভুটানে ধনী মানুষ ছাড়া অন্যান্য মানুষের পর্যটনের উদ্দেশ্যে যাওয়ার প্রবণতা কম।
৩। সুযোগ সুবিধা (Amenities): পর্যটনের ক্ষেত্রে মানুষ কিছু বাড়তি সুবিধা পেতে চায়। এর মধ্যে রোপিং, স্কেটিং, প্যারাগ্লাইডিং, রোয়িং, ফিসিং ও দু:সাহসিক সাফারির কথা বলা যায়। যে সকল পর্যটন গন্তব্যে এই সুযোগ সুবিধাগুলো থাকে সেখানে মানুষের ভিড় জমে। যেমন সিকিম ঘুরতে গেলে মানুষ 'প্যারাগ্লাইডিং-এর সুবিধা পায় এবং সুইজারল্যান্ডে ঘুরতে গেলে মানুষ 'স্কেটিং'-এর সুবিধা পায়।
৪। আনুষঙ্গিক সুবিধা (Ancillary Service): পর্যটন গন্তব্যের আনুষঙ্গিক সুবিধা যেমন- ব্যাঙ্ক, বীমা, ইন্টারনেট, টেলিকম সংযোগ, হাসপাতাল, পুলিশি নিরাপত্তা পর্যটকদের আকর্ষণ করে। শুধু তাই নয় এই বিষয়গুলি পর্যটন গন্তব্যের স্থানীয় অর্থনীতিকে উন্নত করে।
গ) ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক নিয়ন্ত্রক (Historical and Cultural Factors); অধিকাংশ পর্যটক ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থানে ভ্রমণ করতে চায়। কারণ এই সকল স্থানগুলির সাথে কিছু গল্প ও কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা যুক্ত থাকে। প্রাচীন ঐতিহাসিক নির্মাণ, বিভিন্ন দুর্গ, প্যালেস ও রাজরাজড়াদের প্রাচীন সম্পত্তি ও তাদের যুদ্ধের নিদর্শন মানুষকে আকর্ষণ করে। এই সকল ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষামূলক স্থান রূপে চিহ্নিত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বিষ্ণুপুর এই কারণেই পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মিশরের গিজা অঞ্চলে পিরামিড দেখার উদ্দেশ্যে পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষ ছুটে আসে।
ঘ) ধর্মীয় নিয়ন্ত্রক (Religious Factors): ধর্মীয় কেন্দ্রগুলি মানুষের আধ্যাত্মিক ও অন্তরের শান্তি পাওয়ার স্থান হিসাবে পরিচিত। মানুষ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে জন্ম, মৃত্যু ও বিভিন্ন পুণ্য কর্মের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে যায়। এখানে তাদের বিশ্বাস ও আস্থা জড়িত। পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে পর্যটনের ভিড়ের প্রধান. কারণ এটি। সৌদি আরবের মক্কা মদিনা, ইজরয়েলের জেরুজালেম, ভারতের
বেনারস ও অমৃতসর এগুলি প্রধান ধর্মীয় পর্যটক গন্তব্যের উদাহরণ।
3) অন্যান্য নিয়ন্ত্রক ( Other Factors): উপরিউক্ত কারণগুলি ছাড়াও অন্যান্য বিমিশ্র কারণ পর্যটকদের উপর প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন তহা, গভীর সমুদ্র, উষ্ণ প্রস্রবণ, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি স্থানে মানুষ পৌঁছায়। পৃথিবীর ভৌতিক স্থানগুলি মানুষের পর্যটকের আকর্ষণ, রাজস্থানের ভানগড়, ইউরোপের ট্রানসিলভেনিয়া এই কারণে পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। ১৯৪৭ সালে মেক্সিকোর রসওয়েল অঞ্চলে যে অন্য গ্রহের যান ( UFO Unidentified Flying Object) এসে আঘাত হেনেছিল তা এই অঞ্চলটিকে পর্যটন গন্তৰে | পরিণত করেছে।
চ) প্রেরণাগত নিয়ন্ত্রক (Motivation factors): অনুপ্রেরণা অর্থে উদ্দেশ্য, যার অর্থ ব্যক্তির নিজস্ব প্রয়োজন বা ইচ্ছা। এটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যক্তিকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করার প্রক্রিয়া। ভ্রমণের জন্য পর্যটকদের প্রেরণার প্রধান কারণ হল মানুষের স্বকীয় চিন্তাভাবনা যা সম্পূর্ণ মনোবৈজ্ঞানিক, যেটি মানুষের মনে পরিতৃপ্তি এনে দেয়। কোনও ব্যক্তির পর্যটন প্রেরণার নির্ণায়কগুলিকে দুভাগে ভাগ করা হয়।
১। অন্তর্নিহিত প্রেরণা (Intrinsic Motivation): অনুপ্রেরণার স্বকীয় অভ্যন্তরীণ নির্ণায়কগুলি মানুষের স্বভাব ও ব্যবহারকে সম্পূর্ণরূপে পরিচালনা করে এবং মানুষ এই স্বভাবেই ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, এই প্রেরণাকে অন্তর্নিহিত প্রেরণা (intrinsic motivation) বলে। বেশির ভাগ মানুষের কাছে ভ্রমণ হল তৃপ্তির একটি পথ যেটি মানুষের মনের নানান ইচ্ছাপূরণ করে। এই ইচ্ছাগুলি হল- ভ্রমণ, অবসর, একান্ত দূরীকরণ, আরাম, নতুনত্ব সৃষ্টি উপলব্ধি এবং নিজের সামর্থ্যের বহি:প্রকাশ। স্বকীয় প্রেরণাগুলিই পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ এনে দেয়। পর্যটন পর্যটকদের মজা, আনন্দ, নানান আবেগপ্রবণ ঘটনাকে পুরস্কার হিসাবে দিয়ে থাকে। অন্তর্নিহিত প্রেরণার কিছু স্বকীয় নির্ণায়ক হল
পর্যটকের আচরণ: মানুষের জ্ঞান, কোনো স্থান বা বিষয়ের উপর ধনাত্বক বা ঋণাত্বক চিন্তাভাবনা সৃষ্টি করে যা ঐ গন্থব্য স্থানে পৌঁছানোর প্রেরণা সৃষ্টি করে।
পর্যটকের উপলব্ধি: পর্যটক তার প্রত্যক্ষকরণ ক্ষমতার উপর নির্ভর করে (দেখা, শোনা, জ্ঞান) একটি অঞ্চল, কোনো মানুষ বা বস্তুকে উপলব্ধি করে থাকে, যা পর্যটনের প্রেরণা সৃষ্টি করে।
বিশ্বাস: পর্যটনের জন্য প্রেরণা, মানুষের বিশ্বাস-এর উপরও নির্ভর করে।যেমন- ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই তীর্থস্থানগুলি পর্যটন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
পর্যটকদের ব্যক্তিত্ব: পর্যটনের জন্যে প্রেরণা সৃষ্টিতে পর্যটকের প্রকৃতি ও দৈহিক গঠন এক গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক, যেমন- সুঠাম দেহযুক্ত যুবক ও পরিণত মানুষেরা দুঃসাহসিক পর্যটনে অংশগ্রহণ করে থাকে।
২। বহির্মুখী প্রেরণা (Extrinsic Motivation): মানুষের পর্যটনের জন্য কিছু বহির্মুখী প্রেরণার দ্বারা প্রেরিত হয়, যেগুলি হল অর্থ ও উপযুক্ত ব্যয়ক্ষমতা এবং কর্মক্ষমতা। এছাড়াও যে বিষয়গুলি বহির্মুখী প্রেরণাকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেগুলি নিম্নরূপ
পর্যটকদের জন্মস্থান (Place of Origin): মানুষ যে স্থানে জন্মায়, বড় হয় সেই সমাজ ব্যবস্থা তাদের জীবনের উপর ছাপ ফেলে। একটি উন্নত অঞ্চলের মানুষ যেরূপ ভ্রমণ ব্যবস্থা পছন্দ করে অনুন্নত দেশের মানুষেরা অর্থের অভাবে সেই ধরনের ভ্রমণ ব্যবস্থা বহন নাও করতে পারে। শুধু তাই নয় উন্নত দেশের পোশাক পরিচ্ছদ তারা পছন্দ নাও করতে পারে, এই কারণে সব মানুষ সব দেশে ঘুরতে যেতে পছন্দ করে না।
পরিবার ও বয়স (Family and Age): বর্তমানে বেশিরভাগ পরিবার ছোট (nuclear family) হওয়ায় পারিবারিক আয় অনেক বেশি হয়, যার ফলে এই পরিবারগুলি তাদের বাসস্থান থেকে অনেক দূরের জায়গায় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যায়। অপরপক্ষে, একত্রিত পরিবারের (joint family) পারিবারিক আয় অনেক কম হওয়ার জন্য তিনি কাছাকাছি জায়গায় ঘুরতে যেতে চান। এছাড়াও বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিভিন্ন ভ্রমণ স্থান পছন্দ করে, যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ডিজনিল্যান্ডে প্রবীণ নাগরিকদের থেকে ৫-৪৫ বছরের মানুষরা বেশি ঘুরতে যেতে যায়।
সংস্কৃতি ও সামাজিক শ্রেণি (Culture and Social class): বিভিন্ন সংস্কৃতির (culture)-এর মানুষ বা পর্যটক বিভিন্ন রকম ভ্রমণ স্থান, উৎসব ও বিভিন্ন রকমের ভ্রমণ ব্যবস্থা পছন্দ করে।
বাজার (Market): কোনো দেশের মুদ্রার মূল্য, রাজনৈতিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হলে সেখানে পর্যটকদের ভ্রমণের ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।
0 Comments