বিশ্ব
ক্ষুধা ইনডেক্স ২০২০: পাকিস্থান , বাংলাদেশের থেকে পিছিয়ে ভারত(৯৪)।
সাম্প্রতি বিশ্ব ক্ষুধা ইনডেক্স
২০২০ প্রকাশিত হয়েছে যেখানে ভারতের স্থান খুবই নগণ্য। ১০৭ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান
মাত্র ৯৪ , যেখানে পাকিস্থান (৮৮), বাংলাদেশ (৭৫) , নেপাল ( ৭৩) , শ্রীলঙ্কা (৬৪) মত
প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতের থেকে এগিয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতের স্থান ছিল ১১৭ টি দেশের
মধ্যে ১০২। বিশ্ব ক্ষুধা ইনডেক্স স্কেল অনুসারে ভারতের গুরুতর ( “SERIOUS”) পর্যায়ে
রয়েছে। এই সূচক অনুসারে সবচেয়ে প্রথমে রয়েছে চিন যার স্কোর <৫ যেখানে ভারতের স্কোর
২৭.২।ভারতের পিছনে রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি দেশ। তারমধ্যে আফগানিস্থান রয়েছে ৯৯তম স্থানে
যার স্কোর ৩০.৩।
বিশ্ব ক্ষুধা ইনডেক্স
হল বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার ব্যাপক মাত্রার পরিমাপ ও চিহ্নিতকরন। যা প্রতিবছর অক্টোবরমাসে
প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে আমেরিকার সংস্থা International Food Policy Research
Institute (IFPRI) এবং জার্মান সংস্থা
Welthungerlife যৌথ উদ্যোগে শুরু হয়েছিল বিশ্ব ক্ষুধা ইনডেক্স। যা ২০০৭ সালে
ইরিস NGO Concern Worldwide এই দুই সংস্থার সাথে যুক্ত হয়। ২০১৮ সালে আমেরিকার সংস্থা
International Food Policy Research Institute (IFPRI) এই প্রোজেক্ট ছেড়ে দেওয়াতে বর্তমানে
জার্মান সংস্থা Welthungerlife ও ইরিস NGO
Concern Worldwide এই দুই সংস্থা দ্বারা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশিত হয়।
ক্ষুধা পরিমাপ করার
জন্য বিভিন্ন নির্দেশক ব্যবহার করা যেতে পারে, ক্ষুধার বহুমুখী প্রকৃতি নির্ধারন করার
জন্য মূলত ৪ টি নির্দেশক ব্যবহার করা হয় সেগুলি নিম্নরূপঃ
*
অপুষ্টি(
undernourishment) : বিশ্বের জনসংখ্যার নিরিখে
কত শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার।
*
শিশুর কম ওজন (
Child Wasting): পাঁচ বছরের কম অপুষ্টির কারণে ওজন কম। গত দুই দশক ধরে এর অবস্থানের
অবনতি হচ্ছে।
*
শিশু দুর্বল (
Child Stuning): পাঁচ বছরের কম বয়সী কত জন শিশু শারীরিকভাবে দুর্বল। ২০২০ সালের সূচক অনুসারে
ভারত এখনও খুব খারাপ জায়গাতে রয়েছে।তবে ২০০০
সালে যা ৫৪% ছিল সেটা কমে ২০২০ সালে ৩৫% হয়েছে।
*
শিশু মৃত্যু হার(
Child Mortaity Rate): পাঁচ বছরের কম কত শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছে প্রতিবছর । শিশু
মৃত্যুহারে ভারতের উন্নতি হয়েছে। ২০২০ সালে এর হার ৩.৭%
বিশ্ব ক্ষুধা সূচক কিভাবে পরিমাপ করা হয়?
|
|
·
CS (Prevalence
of stuning in children under five) - বিশ্বে মোট জনসংখ্যার কত জন শিশু যারা পাঁচ বছরের
কম বয়সী তারা দুর্বল রয়েছে।
·
CW (Prevalence
of wasting in children under five) - বিশ্বে
মোট জনসংখ্যার কত জন শিশু যারা পাঁচ বছরের কম বয়সী তারা কম ওজন বিশিষ্ট
·
CM (Proportion
of Children dying before the age of five in percentage) – পাঁচ বছর বয়সী কম শিশু
মৃত্যুর শতকরা হার ।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের মাপনী নিম্নরূপঃ
ধরন ( category) |
মান( score) |
কম( Low) |
<= ৯.৯ |
মধ্যম ( Moderate) |
১০.০- ১৯.৯ |
গুরুতর ( Serious) |
২০.০-৩৪.৯ |
বিপদপুর্ন ( Alarming ) |
৩৫.০-৪৯.৯ |
অতি বিপদপুর্ণ ( Extremely Alarming) |
>=৫০.০ |
বিগত ১০ বছরের ত্থিম
বা যে বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করা হয়েছিল বা হয়েছে সেগুলি হল
2010: Early childhood undernutrition among
children younger than the age of two
2011: Rising and more volatile food prices of the
recent years and the effects these changes have on hunger and malnutrition.
2012: Achieving food security and sustainable
use of natural resources, when the natural sources of food become increasingly
scarce.
2013: Strengthening community resilience
against undernutrition and malnutrition.
2014: Hidden hunger, a form of undernutrition
characterized by micronutrient deficiencies.
2015: Armed conflict and its relation to
hunger.
2016: Reaching the UN Sustainable Development
Goal of zero hunger by 2030.
2017: The challenges of inequality and hunger.
2018: Forced migration and hunger.
2019: The challenge of hunger and climate change
2020: “One
decade to Zero Hunger: Linking Health and Sustainable Food Systems.
খাদ্য সংকটের প্রধান
কারণগুলি হলঃ
বিশ্বব্যাপী খাদ্য
সংকটের বিভিন্ন কারণ হতে পারে সেগুলি হল
একটা বড়
সংখ্যক ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের অবস্থানঃ ক্ষুদ্র
ও প্রান্তিক কৃষকদের উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ভারতের ৫০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুদ্র
ও প্রান্তিক কৃষিকাজের সাথে যুক্ত।মাটির উর্বরতা হ্রাস, খণ্ডিত জমি , বাজারে দামের
উঠা নামা প্রভৃতির কারনেও উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ভারতে উদ্বৃত্ত খাদ্য থাকার
সত্ত্বেও এই ক্ষুদ্র ও প্রান্তীয় কৃষকরা সারা বছরের খাদ্য জোগানে আপারক হয়।
মাথাপিছু
আয় কমঃ
সমাজের একাংশ মানুষের
আপেক্ষিক আয় হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি ঘটায় সেই মানুষের কেনার ক্ষমতা হ্রাস পায়।
বেকারত্বঃ
বেকারত্ব খাদ্য সংকটের প্রধান কারণ, একাংশ লোকের কাজের সুযোগ কম থাকায় বেকারত্ব দেখা দেয়।" The Periodic Labour Survey " অনুসারে ২০১৭-২০১৮ গ্রামাঞ্চলে বেকারত্ব হার ৬.১%।
মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীন কর্মসূচি ( MGNREGA) 2005 অনুসারে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও তা পরবর্তী সময়ে হ্রাস পায়।
দূর্বল রেশনিং ব্যবস্থা:-
সঠিক ভাবে রেশনিং ব্যবস্থা বণ্টিত না হওয়ার জন্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
অমর্ত্য সেন তাঁর বই " Poverty and Famine" তে " Exchange Entitlement Decine" এর ধারণা দেন। তাঁর মতে যে মানুষ যে পেশায় যুক্ত সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান না যে তারা যথাযথ খাদ্য কিনতে সক্ষম।
ক্ষুধা নিবারণের উপায়
১) সরকার দ্বারা উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
২) ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের অবস্থার উন্নতি করা।
৩) অতি দরিদ্র পরিবারের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা।
৪) MGNREGA দ্বারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
৫) সঠিক ভাবে রেশনিং ব্যবস্থার বন্টন
পরিশেষে বলা যেতে পারে, বতর্মানে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা গৃহীত "One Nation One Card " মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আশাবাদী।
0 Comments