ওড়িশার নদনদী, হ্রদ ও জলাশয়
নদনদী
ওড়িশা রাজ্যটি বিভিন্ন নদী এবং তাদের শাখানদী
দ্বারা আবদ্ধ৷ এই রাজ্যের বেশিরভাগ প্রধান নদী পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে৷ মহানদী হল ওড়িশার বৃহত্তম নদী এবং ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম
নদী৷ এই রাজ্যের নদিগুলিকে তাদের উৎস আনুসারে চারটি শ্রেণীতে
ভাগ করা হয়েছে যথা—
i.
ওড়িশার বাইরে থেকে উৎপন্ন নদী— ব্রাম্ভনি(Brahmani),সুবর্ণরেখা(Subarnarekha), মহানদী(Mahanadi)৷
ii.
ওড়িশার
অভ্যন্তরে উৎপন্ন নদী— বৈতরনী(Baitarani), বুধাবালাঙ্গা(Budhabalanga), সালান্ডি(Salandi), ঋষিকুল্যা (Rushikulya)৷
iii.
ওড়িশার
অভ্যন্তরে উৎপন্ন হয়ে অন্যান্য রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এমন নদী— বাহুদা(Bahuda),
বংশধারা(Vanshadhara), নাগাভালি(Nagavali)৷
iv.
ওড়িশার
অভ্যন্তরে উৎপন্ন নদীর শাখানদী অন্য রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এমন নদী— মাছকুণ্ডু(Machhkund),
সিলেরু(sileru), কোলাব(Kolab), ইন্দ্রাবতি(Indravati)৷
মহানদী হল ওড়িশার
বৃহত্তম নদী৷
এটি ছত্রিশগড়ের
রায়পুর জেলার বাস্তার(Bastar) মালভুমির অমরকণ্টক পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়েছে৷
বৈশিষ্ট্য—
a) মহানদী হল অন্যতম প্রধান পূর্ববাহী
উপদ্বীপীয় নদী যেটি বঙ্গপসাগরে পতিত হয়েছে৷
b) নদীটি
প্রায় ৮৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যার ৪৯৪ কিলোমিটার রয়েছে ওড়িশার অভ্যন্তরে৷
c) এর নদী
অববাহিকাটি ১৪১,৬০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে ছরিয়ে রয়েছে৷ (ওড়িশায় ৬৫,৫৮০ বর্গ
কিলোমিটার)
d) নদীটি
গড়ে প্রায় ৯২,৬০০ মিলিয়ন মিটার জল বহন করে৷
e) ওড়িশার
অভ্যন্তরে মহানদীর শাখানদী গুলি হল— IB, Ong এবং
Tel৷
· ব্রাম্ভনি নদী(Brahmani) —
ব্রাম্ভনি হল ওড়িশার দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী৷ এটি শঙ্খ(Sankh) এবং কোয়েল(Koel) নামে দুটি
প্রধান নদী হিসাবে উদ্ভূত হয়েছে এবং উভয়ই ওড়িশার সুন্দরগড় জেলার রাউরকেল্লার(Rourkela)
নিকটে বেদ ব্যাসে(Veda-vyasa) মিলিত হয়ে ব্রাম্ভনি নদী গঠন করেছে৷ এটি সুন্দরগড়(Sundargarh), কেন্দুঝড়(Kendujhar),
ঢেঙ্কানাল(Dhenkanal), কটক(Cuttack) এবং জেয়পুর(Jajpur) জেলার মধ্য দিয়ে উপকূলীয় সমভুমিতে
প্রবাহিত হয় এবং ধম্র(Dhamra) হিসাবে পরিচিত মহানদীর সাথে সম্মিলিত মুখ সহ বঙ্গপসাগরে
প্রবেশ করে৷
ব্রাম্ভনি নদীটি
৭৯৯ কিলোমিটার দীর্ঘ (৫৪১ কিলোমিটার ওড়িশায়)৷ এর নদী অববাহিকা অঞ্চলটি ওড়িশায় প্রায়
৩৯,০৩৩ বর্গকিলোমিটার প্রসারিত৷
· বৈতরনী নদী(Baitarani) —
এটি কেওনঝড় জেলার গোনাসিকা(Gonasika) পাহাড় থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে৷ এটি ৩৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর নদী অববাহিকা
অঞ্চল ১২,৭৯০ বর্গকিলোমিটার প্রসারিত৷ এটি সুবর্ণরেখার চাঁদবালির(Chandabali)
কাছে বঙ্গপসাগারে প্রবেশ করেছে৷
· সুবর্ণরেখা নদী(Subarnarekha)—
এটি ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে উৎপন্ন
একটি বৃষ্টির জলে পুষ্ট নদী৷ ভারতের প্রধান নদীগুলির মধ্যে এই নদীর অববাহিকাটি সবচেয়ে ছোট৷ এটি ঝাড়খণ্ডের
প্রধান শহরগুলি দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং পরে ওড়িশায় প্রবেশ করে৷ এটি ৪৩৩
কিলোমিটার(ওড়িশায় ৭০ কিলোমিটার) এবং এর গড় আয়তন রয়েছে ১৯,৫০০ কিলোমিটার(ওড়িশায় ৩,২০০
কিলোমিটার) যার গড় বার্ষিক প্রবাহ ৭,৯০০ মিলিয়ন৷ এটি শেষে
ওড়িশার কিরতানিয়া(Kirtania) বন্দরের
কাছে বঙ্গপসাগরে প্রবেশ করে৷
· বুধাবালাঙ্গা নদী(Budhabalanga)
—
এটি সিমলিপালা পর্বতমালার পূর্বঢাল থেকে উৎপন্ন
হয়েছে৷ এটি প্রায়
১৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪৮৪০ বর্গকিলোমিটার মোট অববাহিকা যুক্ত যার বার্ষিক প্রবাহ
২১৭৭ মিলিয়ন মিটার৷ এর প্রধান শাখানদী গুলি হল - সোন(Sone), গাঙ্গাধার( Gangadhar), কাটরা( Catra)৷
• ঋষিকুল্যা নদী (Rushikulya) —
এটি ফুলবানী(Phulbani) জেলার পূর্বঘাটের রুশমালা (Rushyamala) পাহাড় থেকে উদ্ভূত হয়েছিল৷ এটি ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৮৯০০ বর্গকিলোমিটার
অববাহিকা অঞ্চলযুক্ত৷
এর উপনদী গুলি
হল-বাঘুয়া(Baghua) , ধনেই(Dhanei) , বদনাদি(Badanadi)
ইত্যাদি৷ এর সম্মুখে কোনো বদ্বীপ নেই৷
· বংশধারা নদী(Vanshadhara)
—
এটি কালাহান্দি জেলার পূর্বঘাটের দুর্গাঙ্কর(Durgakangar ) ( Lingaraj hills) পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে উদ্ভূত
হয়েছে৷ এটি ২৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ, এর মধ্যে ওড়িশায় কেবল ১৫০ কিলোমিটার৷ এটি অন্ধ্রপ্রদেশের
কলিঙ্গপট্টনমে(Kalingapatnam) বঙ্গপসাগরে প্রবেশ
করেছে৷ এটির আয়তন ১১,৫০০ বর্গকিলোমিটার৷
· নাগাভালি নদী(Nagavali) —
এটি লঞ্জিগড়ের(Lanji garah)
নিকটবর্তী পূর্বঘাটের বিজিপুর(Bijipur ) পাহাড় থেকে উদ্ভূত হয়েছিল৷ এটি ২১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যার মধ্যে ১০০
কিলোমিটার রয়েছে ওড়িশায়৷
এটির মোট অববাহিকা
অঞ্চলটি প্রায় ৯,৪১০ বর্গকিলোমিটার৷
· ইন্দ্রাবতি
নদী(Indravati)——
এটি কালাহান্দি(Kalahandi) জেলার
পূর্বঘাট থেকে উদ্ভূত হয়েছে৷ এটি ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪১,৭০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন
যুক্ত৷ নদীটি শাখানদী হিসাবে গোদাবরি(Godabari) নদীতে প্রবাহিত হয়েছে৷
· কোলাব
নদী(Kolab) —
এটি কোরাপুট(koraput) জেলার পূর্বঘাটের সিনকরন(Sinkaran) পাহাড় থেকে উদ্ভূত হয়েছে৷ এটির আয়তন ২০,৪০০ বর্গকিলোমিটার৷
· হ্রদ ও উপহ্রদ —
ওড়িশায় বেশ কয়েকটি হ্রদ ও উপহ্রদ রয়েছে যেগুলি এই রাজ্যের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যকে আরও আকর্ষণীও করে তুলেছে৷ ওড়িশার চিল্কা উপহ্রদ বিশ্বের বৃহত্তম লোনা জলের উপহ্রদ এছারাও
এই রাজ্যে আরও কয়েকটি মিষ্টি জলের হ্রদ রয়েছে যেমন - আনশুপা ,
সারা ও কঞ্জিয়া ।
ওড়িশা উপকূলীয়
সমভূমির দক্ষিণাংশে অবস্থিত ভারতের বৃহত্তম লোনা জলের উপহ্রদ৷ এটি ওড়িশার গঞ্জম, খুরদা এবং পুরী জেলা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে৷ এর ক্ষেত্রফল ৯০০ বর্গকিলোমিটার এবং ১১৬৫ বর্গকিলোমিটার৷ বর্ষার সময় এর লবনাক্ততার পরিমাণ সর্বনিম্ন হয়৷ এটি “The New Caledonian Barrier reef” এর পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম
নোনা জলের উপহ্রদ৷ এটি “UNESCO world
heritage site” হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ এটি ভারতীয় উপমহাদেশের পরিযায়ী পাখির বৃহত্তম শীতকালীন আবাস্থল।
এই হ্রদে অনেকগুলি বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী রয়েছে৷ হ্রদটি বৃহত্ মৎস্য সম্পদ সমেত একটি বাস্তুতন্ত্র।
হ্রদটিকে ঘিরে ১৫০,০০০ এরও ধীরব বেঁচে আছে৷
আনসুপা হ্রদ(Ansupa Lake) —
আনসুপা হল একটি মিষ্টি পানীয়
জলের হ্রদ, যা কটক জেলার বাঁকিতে অবস্থিত৷ এটি দৈর্ঘ্যে ৩ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১.৫ কিলোমিটার৷
· সারা হ্রদ(Sara Lake) —
পুরীর নিকটে অবস্থিত সারা আরেকটি মিষ্টি
পানীয় জলের হ্রদ৷ এটি দৈর্ঘ্যে ৫ কিলোমিটার
এবং প্রস্থে ৩ কিলোমিটার৷
· কাঞ্জিয়া হ্রদ(Kanjia Lake) —
মিষ্টি জলের হ্রদ৷ ভুবনেশ্বরের নিকটবর্তী কটক জেলায় অবস্থিত৷
কৃত্রিম জলাধার(Artificial Lake) —
·
ইন্দ্রবতী বাঁধ : কলাহান্দি এবং নবরঙ্গপুরের কৃত্রিম হ্রদ।
·
কোলাব বাঁধ : কোরাপুতের কৃত্রিম হ্রদ।
প্রস্রবন(Spring) —
ওড়িশায় প্রচুর উষ্ণ প্রস্রবন রয়েছে। কেওনজহর জেলার বাদাঘাগড়া ও সানাঘাগড়া, ধেনকানাল জেলার সপ্তসয্যা, জাজপুর জেলার চান্দিখোল, খোরদা জেলার বরুনেই, গাঁজাম জেলার তপ্তপাণি, নারায়ণী, কালাহান্দি জেলার পটলগঙ্গা, বারগড় জেলার নার্সিংনাথ এবং বালিশংগরের হরিসঙ্কর।
তথ্যঃ- Wkipedia, Topography-Orissa government portal, Maps of
India-Geography of Orissa,
Orissa river profile-SANDRP, Social village-maps of odisha, Orissa PSC
notes-Geography of Orissa
গার্গী দাস
আন্দুল,
হাওড়া
0 Comments