ওড়িশার ভূপ্রকৃতি // Physical
Features of Odisha
ওড়িশার ভুমির গঠন যথেষ্ট বৈচিত্র্যময়৷ রাজ্যটি বিচিত্র আবাসস্থল
সহ ঘন সবুজ গাছপালা এবং পাহাড়ি ভূখণ্ড দ্বারা সমৃদ্ধ৷ এই রাজ্যটি তিনটি
প্রধান অঞ্চল মালভূমি, পর্বত ও উপকূলীয় সমভূমি নিয়ে গঠিত৷ সমসত্ত্বতা, ধারাবাহিকতা
এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে ওড়িশা পাঁচটি বৃহৎ ভূমিরূপ অঞ্চলে বিভক্ত
হয়েছে৷ সেগুলি হল -
I. উৎকল সমভূমি বা পূর্বের ওড়িশা
উপকূলীয় সমভূমি৷
II. মধ্যবর্তী পর্বতমালা এবং উচ্চভূমি
অঞ্চল৷
III. কেন্দ্রীয় মালভূমি অঞ্চল৷
IV. পশ্চিমে তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি
অঞ্চল৷
V. প্রধান বন্যা সমভূমি৷
I.
উৎকল সমভূমি বা
পূর্বের ওড়িশা উপকূলীয় সমভূমি ——
ওড়িশা উপকূলীয় সমভূমি বা উৎকল
সমভূমি সাম্প্রতিক উৎসের পললভূমি৷
এর পশ্চিমের সীমানায়
প্রায় ২৫০ ফুট আঞ্চলিক পূর্বঘাট এবং এর পূর্বদিকে প্রায় সোজা তটরেখা রয়েছে৷ এই অঞ্চলটি উত্তরের সুবর্ণরেখা(Subarnarekha)
অববাহিকা থেকে দক্ষিণে ঋষিকুল্য(Rushikulya) অববাহিকা পর্যন্ত প্রসারিত৷
বৈশিষ্ট্য ——
a. সমভূমি অঞ্চলটি ভুতাত্ত্বিকভাবে
প্যাঁলেওজিন এবং নিওজিন যুগের (প্রায় ৬৫ থেকে ২.৬ মিলিয়ন বছর আগে) অন্তর্গত৷
b. এই অঞ্চলের একটি বড় অংশ ছয়টি
প্রধান নদীর বদ্বীপ দ্বারা গঠিত, সেগুলি যথাক্রমে- মহানদী(Mahanadi), ব্রাম্ভনী(Brahmani),
সুবর্ণরেখা(Subarnarekha), বৈতরনী(Baitarani), বুঢ়াবালঙ্গ(Budhabalanga), ঋষিকুল্য(Rushikulya) নদী৷
তাই ওড়িশার উপকূলীয় সমভূমিটিকে “Hexadeltaic region” বা “Gift of six rivers” বলা
হয়৷
c. সমভূমি
অঞ্চলটি মহানদীর বদ্বীপের(মধ্য উপকূলীয় সমভূমি) নিকট সর্বাধিক প্রস্থ সহ
বঙ্গপসাগরের উপকূলে বিস্তৃত হয়েছে৷ এরপর এটি বালেশ্বর জেলার উত্তরের উপকূলীয়
সমভূমিতে ধীরে ধীরে সংকীর্ণ হয় এবং গাঁজাম জেলার দক্ষিণ উপকূলীয় সমভূমিতে (গঞ্জম
সমভূমি নামে পরিচিত) ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে বিস্তৃত হয়েছে৷
d. এই
অঞ্চলের উত্তর উপকূলীয় সমভূমিটি বুঢ়াবালঙ্গ(Budhabalanga)
এবং সুবর্ণরেখা(Subarnarekha) নদীর বদ্বীপ সমূহ নিয়ে গঠিত যেগুলি মুলত “সামুদ্রিক সীমা
লঙ্ঘনের(Marine transgressions)” প্রমান বহন করে৷
e. মধ্য উপকূলীয় সমভূমিটি সর্বাধিক
প্রশস্ত ও বৃহত্তম যেটি মহানদি(Mahanadi), ব্রাম্ভনী(Brahmani) ও বৈতরনী(Baitarani)
নদীর মিলিত বদ্বীপ নিয়ে গঠিত৷ এই অঞ্চলটিতে অতীত “পশ্চাদপসাগর(Back bays)” এবং বর্তমান
হ্রদ গুলির প্রমান রয়েছে৷
f. দক্ষিণ উপকূলীয় সমভূমিতে চিলিকা(Chilika)
হ্রদের হ্রদসৃষ্ট সমভূমি(Laccustrine Plane) এবং ঋষিকুল্য(Rushikulya) নদীর ছোট বদ্বীপ
লক্ষ্য করা যায়৷
II.
মধ্যবর্তী পর্বতমালা
এবং উচ্চভূমি অঞ্চল ——
মধ্যবর্তী পর্বতমালা এবং উচ্চভূমি
অঞ্চলটি ভৌগোলিক অঞ্চলের বৃহত্তম এবং রাজ্যের প্রায়
তিন চতুর্থাংশ জুড়ে রয়েছে৷
এই অঞ্চলটি বেশিরভাগ
পূর্বঘাটের পাহাড় এবং পর্বতমালার সমন্বয়ে গঠিত৷
এই অঞ্চলের
গড় উচ্চতা গড় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০০ মিটার ওপরে৷
বৈশিষ্ট্য ——
a.
এই
অঞ্চলটি পূর্বদিকে হঠাৎ খাড়াভাবে উথিত হয়েছে এবং পরে ধীরে ধীরে ঢাল বরাবর উত্তর-পূর্ব(ময়ুরভঞ্জ)
থেকে উত্তর-পশ্চিম(মালকানগিরি) পর্যন্ত পশ্চিমে একটি বিছিন্ন বা ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমিতে
পরিণত হয়েছে৷
b. ভুতাত্বিকভাবে
এই অঞ্চলের গঠনটি বেশ পুরানো৷ এটি ভারতীয় উপদ্বীপের গণ্ডয়ানাল্যান্ডের প্রাচীন
বৃহৎ ভূখণ্ডের একটি অংশ ছিল৷ এই পার্বত্য অঞ্চলটি গড়জট(Garhjat) পাহাড় নামেও
পরিচিত৷
c. এই
অঞ্চলটি বেশ কয়েকটি জলবিভাজিকা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছে৷
d. পূর্বঘাট
অঞ্চলটি বেশ কয়েকটি বৃহৎ এবং সংকীর্ণ নদী উপত্যকা ও বন্যা সমভূমি দ্বারা
বাধাপ্রাপ্ত হয়৷
III.
কেন্দ্রীয় মালভূমি
অঞ্চল ——
কেন্দ্রীয় মালভূমিটি পূর্বঘাটের পশ্চিমঢালের
অংশবিশেষ৷
এগুলি বেশিরভাগই
৩০৫-৬১০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট নিমজ্জিত বা ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি৷ অঞ্চলটি দুটি বৃহৎ মালভূমি নিয়ে গঠিত যথা-
· পানপোষ(Panposh)-কেওনঝড়(keonjhar)-পাল্লাহারা(pallahara)মালভূমি
অঞ্চলে রাজ্যের
উত্তরের অংশের উচ্চ বৈতরনী(Baitarani) নদী অববাহিকা গঠিত হয়৷
· নবরংপুর(Nabarangpur)-জেয়পুর(Jeypur) মালভূমি অঞ্চলে রাজ্যের দক্ষিণ অংশের সবরি(sabari)
নদী অববাহিকা গঠিত হয়৷
IV.
পশ্চিমের তরঙ্গায়িত
উচ্চভূমি অঞ্চল ——
পশ্চিমের
তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি অঞ্চলের উচ্চতা ১৫৩ মিটার থেকে ৩০৫ মিটার পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়৷ এগুলি মালভূমির তুলনাই উচ্চতায় কম হয়৷ এটি নিন্মলিখিত স্বতন্ত্র উচ্চভুমিগুলি
নিয়ে গঠিত-
a. রায়রাঙ্গপুর(Rairangpur)
তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ----
এই অঞ্চলটি ময়ুরভঞ্জ(Mayurbhanj)
জেলার উত্তরাংশ দ্বারা পরিবেষ্টিত৷
উচ্চভূমিটি সুবর্ণরেখা
অববাহিকার একটি অংশ এবং উত্তর দিকে ঢালু৷
b. কেওনঝড়(Keonjhar) বর্ধনভুমি ----
এটি কেওনঝড়
জেলার অংশবিশেষ এবং কেওনঝড় মালভূমির প্রান্তে অবস্থিত৷ এটি বৈতরনী(Baitarani) নদী অববাহিকার
অন্তর্গত৷
c. রাউরকেল্লা(Rourkela) তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ----
এটি সুন্দরগড়(Sundergarh) জেলার অংশ
এবং উচ্চ ব্রাম্ভনি(Brahmani) নদী অববাহিকায় অবস্থিত৷
d. বোলানগির(Bolangir)-বারগড়(Bargarh)-রেঢ়াখোল(Rairkhol) তরঙ্গায়িত
উচ্চভূমি ----
এটি একাধিক জেলার অংশ এবং এটি উচ্চতর
মহানদী এবং এর শাখানদী অববাহিকায় অবস্থিত৷
e. আসকা(Aska) তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ----
এটি গঞ্জাম(Ganjam)
জেলার উচ্চ ঋষিকুল্ল্য(Rushikulya)
নদী অববাহিকায় অবস্থিত৷
f.
রায়াগাদা(Rayagada)
তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ----
এই উচ্চ অঞ্চলটি রায়াগাদা জেলার অংশ
এবং এটি নাগাভালি(Nagavali) এবং বংশধারা(Vansadhara) নদী অববাহিকায় অবস্থিত৷
g. মালকানগিরি(Malkangiri) তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি ----
ওড়িশার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত, এই উচ্চভূমিটি
দণ্ডকারণ্য অঞ্চলের সাবারি(Sabari)-মাছকুণ্ডু(Machhkund) অববাহিকায় অবস্থিত৷
V.
প্রধান বন্যা সমভূমি ——
মূলত পার্বত্যঅঞ্চল,
উচ্চভূমি, এবং মালভুমি অঞ্চলে প্রধান প্রধান নদিগুলির অবস্থানের কারনে এটি বন্যা প্রবন
অঞ্চলে পরিণত হয়েছে৷ বন্যার সমতলটি রাজ্যের সর্বাধিক উর্বর জমি৷ বর্ষার ভারী
বর্ষণ ওড়িশার অনেক অংশে বন্যা পরিস্তিতি সৃষ্টি করে কারন এই রাজ্যের বেশিরভাগ নদী বর্ষাকালে
তাদের স্বাভাবিক স্তর ছাপিয়ে প্রবাহিত হয়৷ প্রতিবছর বন্যায় ক্ষয়ীভূত জমির
মাটি জমে ওড়িশায় বন্যা সমভূমি আকারে উর্বর এই ভূমির সৃষ্টি হয়েছে৷ উর্বর
জমির কারনে ওড়িশা রাজ্যের বেশিরভাগ কৃষিকাজ এই সমভূমিতেই হয়ে থাকে৷ এর উচ্চতা প্রায় ৭৫ মিটার-১৫৩ মিটার পর্যন্ত
পরিবর্তিত হয়৷ ওড়িশায় নয়টি প্রধান বন্যা সমভূমি রয়েছে যথা-
i. বারিপদ(Baripada)
বন্যা সমভূমি৷
ii. আনন্দপুর(Anandapur)
বন্যা সমভূমি৷
iii. তালচের(Talcher)
প্লাবন সমভূমি৷
iv. ভুবন(Bhuban)
বন্যা সমভূমি৷
v. সনেপুর(Sonepur)
বন্যা সমভূমি৷
vi. আটগড়(Athagarh)
বন্যা সমভূমি৷
vii. আসকা(Aska)
বন্যা সমতলভূমি৷
viii.
রায়াগাদা(Rayagada)
বন্যা সমভূমি৷
ix. মালকানগিরি(Malkangiri)
বন্যা সমভূমি।
তথ্যঃ-
Wkipedia, Topography-Orissa government portal, Maps of India-Geography of Orissa,
Orissa river profile-SANDRP, Social village-maps of odisha, Orissa PSC
notes-Geography of Orissa
গার্গী দাস
আন্দুল, হাওড়া
@জিওগ্রাফিয়া
0 Comments