বিযুক্তি রেখা (Discontinuity)// WBSLST// KVS/NVS/DSSSB
বিযুক্তি রেখা (Discontinuity) হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে দুটি ভিন্ন ভূতাত্ত্বিক অঞ্চলের মধ্যে সীমানা।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে বিযুক্তি রেখা থাকার কারণ কি?
আজ থেকে প্রায় কোটি বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল তখন পৃথিবী ছিল প্রচন্ড উত্তপ্ত একটি গ্যাসীয় পিণ্ড। পরবর্তীতে পৃথিবী যতই শীতল হতে থাকে অপেক্ষাকৃত ভারী পদার্থ গুলি (লোহার, নিকেল) পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে থিতিয়ে পড়ে এবং অপেক্ষাকৃত হালকা পদার্থ (এ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন) উপরে ভেসে ওঠে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরে যত গভীরে যাওয়া যায় পদার্থের ঘনত্ব, চাপ এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে তাপমাত্রা, ঘনত্ব, চাপ ও কাঠিন্য প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভূপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত সমান বৈশিষ্ট্যযুক্ত কতগুলি স্তরের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানকালে ভূমিকম্প তরঙ্গের গতি বিধি পর্যালোচনা করে পৃথিবীর অভ্যন্তরের স্তর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তরঙ্গ গুলি দুটি স্তরের সংযোগস্থলে ভিন্ন আচরণ করে। যা দুটি স্তরের মধ্যে বিযুক্তি রেখা বা বিযুক্তি তল এর উপস্থিতিকে নির্দেশ করে।
সুতরাং বলা যায় বিভিন্ন স্তরের ঘনত্ব, তাপমাত্রা, চাপ, পদার্থের কাঠিন্য এবং তরলতা প্রভৃতি স্থানগুলির মধ্যবর্তী স্থান ই বিযুক্তি রেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
১। কনরাডো বিযুক্তিরেখাঃ
সংজ্ঞাঃ ভূত্বকের অন্তর্গত সিয়াল ও সীমার মাঝে যে বিযুক্তিতল রয়েছে যার দ্বারা এই দুটি স্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে কনরাডো বিযুক্তিরেখা বলে।
আবিস্কারঃ ১৯২৫ সালে অস্ট্রিয়ার ভুপদার্থবিজ্ঞানী ভিক্টর কনরাডো এই বিজুক্তিতল আবিস্কার করেন বলে, তাঁর নামানুসারে হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ঃ
১) মহাদেশীয় ও মহাসাগরীয় ভূত্বকের সংযোগস্থল।
২) মহাদেশের নীচে ৭০কিমি এবং মহাসাগরের তলদেশে কম ৫-১০ কিমি
৩)হালকা গ্রানাইট শিলাস্তর সিয়াল ও ভারী ব্যসল্ট শিলাস্তর সীমা বিভক্ত হয়েছে।
৪) P তরঙ্গের গতিবেগ ৬.০-৬.৫ কিমি/সেকেন্ড.
৫) গড়ে এই স্তরের বেধ ২-৩ কিমি
৬) এই স্তরের সাথে Brittle Ductile Transition Zone এর সাথে যুক্ত।
২। মোহো বিযুক্তিরেখাঃ
সংজ্ঞাঃ ভূত্বকের ও গুরুমন্ডলের মাঝে যে বিযুক্তিতল রয়েছে যার দ্বারা এই দুটি স্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে মোহো বিযুক্তিরেখা বলে।
আবিস্কারঃ ১৯০৯ সালে ক্রয়েশিয়ার ভূকম্পবিদ আন্ড্রিজা মোহোরওভিসিক এই বিজুক্তিতল আবিস্কার করেন বলে, তাঁর নামানুসারে হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ঃ
১) মহাসাগরীয় ভূত্বক ও বহিঃ গুরুমন্ডলের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
২) গড়ে প্রায় ৩০ কিমি গভীরে অবস্থিত।
৩) এর বেধ গড়ে ৫০০-৬০০ মিটার হয়ে থাকে।
৪) P তরঙ্গের গতিবেগ ৬.০ কিমি/সেকেন্ড।
৫) এই রেখার অবস্থান শিলামন্ডলে হয়ে থাকে।
৩। রেপিতিও বিযুক্তিরেখাঃ
সংজ্ঞাঃ উদ্ধ গুরুমন্ডল ও নিম্ন গুরুমন্ডলের মাঝে যে বিযুক্তিতল রয়েছে যার দ্বারা এই দুটি স্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে রেপিটিও বিযুক্তিরেখা বলে।
আবিস্কারকঃ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উইলিয়াম . সি. রেপিতিও ১৯৩০ সালে এই বিযুক্তিতল আবিস্কার করেন।
বৈশিষ্ট্যঃ
১) গড়ে প্রায় ৬৬০ কিমি গভীরে অবস্থিত।
২) P তরঙ্গের গতিবেগ ৭.৮ কিমি/সেকেন্ড।
৪। গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা
সংজ্ঞাঃ কেন্দ্রমন্ডল ও গুরুমন্ডলের মাঝে যে বিযুক্তিতল রয়েছে যার দ্বারা এই দুটি স্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে কনরাডো বিযুক্তিরেখা বলে।
আবিস্কারঃ ১৮৯৭ সালে জার্মান ভূবিজ্ঞানী উইশার্ট এবং ১৯১২ সালে বেনো গুটেনবার্গ এই বিযুক্তিতল আবিস্কার করেন বলে, তাঁর নামানুসারে হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য ঃ
১) ভূত্বক থেকে ২৯০০ কিমি নীচে অবস্থিত।
২)এর আরেক নাম ওল্ডহাম গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা।
৩) P তরঙ্গের গতিবেগ ১০ কিমি/সেকেন্ড। P তরঙ্গ এই বিযুক্তিতলকে অতিক্রম করে ভূ অভ্যন্তরের নীচের দিকে প্রবাহিত হলেও S তরঙ্গ প্রবেশ করতে না পারায় ভুমিকম্পের ছায়া বলয় সৃষ্টি হয়েছে।
৫। লেম্যান বিযুক্তিরেখা
সংজ্ঞাঃ উদ্ধ কেন্দ্রমন্ডল ও নিম্ন ্কেন্দ্রমন্ডলের মাঝে যে বিযুক্তিতল রয়েছে যার দ্বারা এই দুটি স্তর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন তাকে লেম্যান বিযুক্তিরেখা বলে।
আবিস্কারকঃ ১৯৩৬ সালে ডেনমার্ক মহিলা ভূকম্পবিদ ইঙ্গে লেম্যান এই বিযুক্তিতল আবিস্কার করেন।
বৈশিষ্ট্যঃ
১) গড়ে প্রায় ৫১৫০ কিমি গভীরে অবস্থিত।
২) P তরঙ্গের গতিবেগ ১১.০ কিমি/সেকেন্ড।
✐ SAYANTANI SINGH MSC.GEOGRAPHY,B.ED,CTET ,NTA NET
0 Comments