সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয়ের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপ চিত্রসহ আলোচনা কর।
সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমুদ্র তরঙ্গ প্রধানত জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয়, অবঘর্ষ, ঘর্ষণ, দ্রবন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্য করে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠন করে। নিম্নে সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপগুলি চিত্রসহ আলোচনা করা হলো-
সমুদ্রভৃগুঃ
সংজ্ঞাঃ
সমুদ্রতীরবর্তী (উপকূলের) উঁচু খাঁজকাটা পাড়কে ভৃগু বলে।ইংরেজি Sea Cliff এর "Cliff" শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো ভৃগু, যার অর্থ উঁচু খাড়াই পাহাড় বা খাড়াই দ্বীপ। প্রতিনিয়ত সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে সমুদ্রের উপকূলভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে অসমান ঢাল যুক্ত খাড়া স্পার সৃষ্টি হয়, তাকে সমুদ্র ভৃগু বলে
সৃষ্টির প্রক্রিয়া:- প্রধানত সমুদ্র তরঙ্গের অবঘর্ষ ও ঘর্ষণ প্রক্রিয়ায় উপকূল ভাগের ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে ভৃগুর সৃষ্টি হয়।প্রধানত তটভূমি ও পশ্চাদভূমির মধ্যে ঢালের সুস্পষ্ট পরিবর্তনের ফলে সমুদ্র ভৃগু সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে প্রথমে কঠিন ও কোমল শিলা দ্বারা গঠিত একটি মসৃন উঁচু মূল ভূখণ্ড ঢালু হয়ে সমুদ্রে এসে মিশলে ওই ভূখন্ডে সমুদ্র তরঙ্গ আঘাত করে এবং কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ঢালু ও মসৃণ ভূমিভাগের ওপর একটি খাঁজ সৃষ্টি করে। এরপর ওই খাঁজ সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং সবশেষে উপকূলস্থ উঁচু ভূমিভাগের কিছু অংশ খাড়া পাড় রূপে সমুদ্রের ওপর ঝুলতে থাকে।
উদাহরণ:- মালাবার উপকূলে (কেরলের) ভৃগু দেখা যায়।
তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চ-
সংজ্ঞাঃ সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে সমুদ্র ভৃগুর পাদদেশে মঞ্চের ন্যায় আকৃতিবিশিষ্ট সমুদ্রমুখী ঢাল যুক্ত যে সমতল পৃষ্ঠ সৃষ্টি হয়, তাকে তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চ বলে।
সৃষ্টির কারণঃ প্রবল সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর দ্বারা গঠিত উপকূল ভাগে প্রথমে একটি খাঁজ সৃষ্টি হয়। এরপর ওই খাঁজ ক্রমশ বড় হতে হতে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছায় যখন ওই খাঁজের ওপরের অংশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এরপর ক্রমাগত তরঙ্গের আঘাতে ওই ঝুলন্ত অংশ একসময় ভেঙে পড়ে এবং অপসারিত হয়। এইভাবে ক্রমাগত ভৃগুর পশ্চাদপসারণের ফলে ভৃগুর সামনের অংশে তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চ গড়ে ওঠে। এই তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চের ঢাল ভৃগুর পাদদেশের দিকে অবতল হয়। তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চের ওপর কঠিন শিলা ক্ষয় প্রতিরোধ করে যে বিছিন্ন ঢিবি রূপে অবস্থান করে, তাকে শিলা প্রাচীর বা রক রীফ বলে।
উদাহরণ:- কঙ্কন উপকূলে (মহারাষ্ট্র, গোয়া) এটি দেখা যায়।
স্ট্যাক ও স্ট্যাম্প-
সংজ্ঞাঃ
সমুদ্রতরঙ্গের ক্ষয় কার্যের ফলে উপকূলের কাছে সমুদ্রে স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকা শিলাস্তুপকে স্ট্যাক বলে। আর স্ট্যাক আরো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চতা হ্রাস পেয়ে স্ট্যাম্প এ পরিণত হয়।
সৃষ্টির প্রক্রিয়া:- সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয়ের ফলে (জলপ্রবাহ ও ক্ল্যাপটিস ক্ষয়) খিলানের ভেঙে যাওয়া অংশ থেকে এটির সৃষ্টি।স্ট্যাকের অধিক ক্ষয়ের ফলে অবশিষ্টাংশ সমুদ্র জলে নিমজ্জিত হয়ে স্ট্যাম্পের সৃষ্টি করে।
উদাহরনঃ
ভারতের কেরালা ও গোয়ার উপকূলে স্ট্যাক ও স্ট্যাম্প দেখা যায়।
সমুদ্র গুহা-
সংজ্ঞাঃ
কঠিন শিলাস্তর দ্বারা গঠিত কোন সমুদ্র ভৃগুর মধ্যে কোমল শিলা অবস্থান করলে সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতের ওই কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে একটি গর্ত সৃষ্টি হয়। একে সমুদ্র গুহা বলে।
সৃষ্টির কারণ
সমুদ্রে প্রসারিত অভিক্ষিপ্তাংশের দুদিকে ক্রমাগত সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতে শিলার ফাটল ও দারণ বরাবর ভৃগুর মধ্যস্থিত কোমল শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্র গুহা সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ-স্কটল্যান্ডে ইনার হেব্রিডিজ দ্বীপপুঞ্জের স্ট্যাফা নামক দ্বীপে ফিঙ্গলজ কেভ নামে একটি সমুদ্র গুহা আছে।
0 Comments