গ্রহরূপে পৃথিবী
নবম শ্রেণী
প্রশ্ন উত্তর সহ আলোচনা
১) পৃথিবীর আকৃতি সমতল নয়, প্রায় গোলাকার –
যুক্তিসহ ব্যাখা কর
উত্তরঃ ষোড়শ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত মানুষের ধারনা
ছিল যে পৃথিবী সমতল কিন্তু পরের দিকে বিভিন্ন দার্শনিকের ব্যাখাতে দেখা যায় যে পৃথিবীর
আকৃতি সমতল নয়, প্রায় গোলাকার হয়ে থাকে । গ্রিক পণ্ডিতদের ব্যাখায় পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে
ধারনা দেন। সর্বপ্রথম এরাটোসথেনিস ধারনা দেন। নিম্নলিখিত যুক্তির সাহায্যে আলোচনা করা হল
১. সুর্যাদয় ও সুর্যাস্তঃ
পৃথিবী যদি সমতল হত তাহলে পৃথিবীর সকল স্থান থেকে এক সঙ্গে
সুর্যদয় এবং সুর্যাস্ত দেখা যেত। কিন্তু পুর্বের দেশগুলি থেকে সুর্যাদয় ও সুর্যাস্ত
আগে হয় পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায়। সুতরাং পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার
২. দিগন্তরেখাঃ
ফাঁকা মাঠে দাঁড়ালে চারদিকে তাহলে আকাশে এবং মাটি এক জায়গায়
বৃত্তাকারে মিলিত হয় তাকে দিগন্তরেখা বলে। পর্বত থেকে যতই উপরে উঠা যায় দিগন্তের পরিধি
ততই বাড়তে থাকে। যদি সমতল হত তাহলে পরিধি একই থাকে।
৩. সমুদ্রগামী জাহাজঃ
উপকুলে দাঁড়িয়ে যদি দেখা যায় একটি জাহাজ ভেসে আসছে। প্রথমে
জাহাজের নিচের অংশ , তারপর ছাদ ও মাস্তুল এবং শেষে পুরো অংশটি দৃশ্যমান হয়। যদি আকৃতি
সমতল হত তাহলে একেবারে সমগ্র অংশ দৃশ্যমান হত।
৪.ধ্রুবতারার অবস্থানঃ
নিরক্ষরেখার কোন স্থান থেকে ধ্রুবতারাকে ০ ডিগ্রি উন্নতি
কোণে দেখা যায়। সেখান থেকে যতই উঁচুতে যাওয়া যায় ধ্রুবতারাকে ততই উঁচুতে দেখা যায়।
উত্তর মেরুতে ধ্রুবতারার অবস্থান ৯০ ডিগ্রি কোণে। উত্তর গোলার্ধে ধ্রুবতারা এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হ্যাডলির অকট্যান্ট
তারার অনুরূপ উন্নতি দেখা যায়।
৫.বেডফোর্ড লেভেল পরীক্ষাঃ
১৮৭০ সালে বিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড রাসেল ওয়ালেস গোলাকার আকৃতি
সম্পর্কে এক পরীক্ষা করেন। বেডফোর্ড নামক খালে
সমান্তরে তিনটি লাঠি পোঁতেন , লক্ষ করেন যে প্রথম এবং তৃতীয় লাঠিটি সমান উচ্চতায় আছে
কিন্তু দ্বিতীয়টি অন্যান্য দুটির তুলনায় অনেক বেশী । এর থেকে বোঝা যায় যে পৃথিবীর আকৃতি
গোলাকার। । সমতল যদি আকৃতি হত তাহলে , তিনটি লাঠি সমান উচ্চতায় থাকত।
৬. পৃথিবীর ছায়া পর্যবেক্ষণঃ
চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের উপর পৃথিবীর ছায়া পড়ে,তার আকৃতি
প্রায় গোলাকার ।যেহেতু গোলাকার বস্তুর ছায়া গোলাকারই হবে, তাই পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারই
হবে।
৭. মহাকাশ থেকে গৃহীত ছবি
কৃত্রিম উপগ্রহ
থেকে প্রাপ্ত ছবি থেকে পাওয়া যায় যে আকৃতি গোলাকার।
২) পৃথিবীকে অভিগত গোলক বলে কেন? স্বপক্ষে যুক্তি দাও?
উত্তরঃ কোন গোলকের দুই প্রান্ত চ্যাপ্টা এবং মধ্যভাগ স্ফিত
হলে তাকে অভিগত গোলক বলা হয়। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু চ্যাপ্টা এবং মধ্যভাগ স্ফিত
তাই একে অভিগত গোলক বলে।
স্বপক্ষে প্রমাণঃ
১) অসমান ব্যাসঃ পৃথিবীর নিরক্ষীয় ও মেরু ব্যাসের আকৃতি
সমান নয়। মেরু ব্যাসের আকৃতি ১২,৭১৪ কিমি এবং নিরক্ষীয় ব্যাসের আকৃতি ১২৭৫৭ কিমি। নিরক্ষীয়
অঞ্চল কিছুটা স্ফিত এবং মেরুদ্বয় চ্যাপ্টা হওয়ায় প্রমাণ করে পৃথিবী অভিগত গোলক ।
২) অসমান ওজোনঃ একই বস্তুকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ওজোন করলে
তার ওজোন কম হয় এবং মেরু অঞ্চলে বেশী হয়, এর থেকে প্রমানিত যে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে
যতদূরে যাওয়া যায় অভিকর্ষজ বল কম হয় সেই জন্য বস্তুর ওজোন কম হয়। মেরু অঞ্চলের ক্ষেত্রে
উলটো হয়ে থাকে।
৩) ঘড়ির সময়ের পার্থক্যঃ ১৬৭১ সালে জ্য রিচার একজন ফরাসি
জ্যোতির্বিদ গিয়ানার রাজধানী কেইন দ্বীপে লক্ষ্য করেন যে তার দোলকযুক্ত ঘড়ি প্রতিদিন
২.৩০মিনিট দেরীতে চলছে। ঘড়িটি প্যারিস শহরে ( ৪৯ ডিগ্রি অক্ষাংশে) ঠিক মত চলছে। কারণ
দোলকযুক্ত ঘড়ির দোলনকাল নির্ভর করে সেইস্থানের মাধ্যাকর্ষন শক্তির উপর।।
৪) পরিধির চাপের
পরিধিঃ যে কোন দ্রাঘিমারেখার উপর ১ ডিগ্রি বৃত্ত চাপের দৈর্ঘ্য নিরক্ষীয় অঞ্চলে
১১০.৫৭ কিমি এবং মেরু অঞ্চলে ১১১.৭০ কিমি। মেরু অঞ্চলে ১ ডিগ্রি বৃত্তচাপ নিরক্ষীয়
অঞ্চলের সমচাপ অপেক্ষা ১.১৩ কিমি বড়।
0 Comments