GEO-H-SKC-B-4-RURAL DEVELOPMENT
RURAL DEVELOPMENT :- CONCEPT
গ্রামীণ উন্নয়নের সংজ্ঞা (Definition of Rural Development)
গ্রামীণ উন্নয়ন একটি বহুমুখী ঘটনা। ফলস্বরূপ অনেক সংজ্ঞা রয়েছে যার কোনোটিই সর্বসম্মত নয়। গ্রামীণ উন্নয়ন হল গ্রামের সম্পদের, স্থানীয় মানুষের সর্বোত্তম শারীরিক ও জৈবিক বিকাশ যা গ্রামীণ জনগণের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক, কাঠামোগত ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন আনা, যার মাধ্যমে অঞ্চল ও জনগণের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব।
গ্রামীণ উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বব্যাঙ্কের মত অনুযায়ী 'Rural development is a strategy to improve the economic and social life of a specific group of people, the rural poor including small and marginal farmers, tenants and the landless'। সাধারণ অর্থে গ্রামীণ উন্নয়ন হল একটি কৌশল যার মাধ্যমে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীর তথা গ্রামীণ দরিদ্রদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষক সম্প্রদায়।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মতে ‘গ্রামীণ উন্নয়ন হল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রামের দরিদ্র মানুষের গুণগত ও পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যর পরিবর্তন আনা, যার মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়নের সাথে সাথে তাদের সামগ্রিক অবস্থার সঠিক পরিবর্তন সম্ভব হয়'।
গ্রামীণ উন্নয়নের বহুমুখী উদ্দেশ্য (Multiple Objectives of Rural Development)
ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল গ্রামীণ উন এদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের পদ্ধতি সময়ের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। 1970 এর পর্যন্ত, গ্রামীণ উন্নয়ন কৃষি উন্নয়নের সমার্থক ছিল এবং তাই কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবন্ধ কর হয়েছিল। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের Millennium Development Goals (2021 ) এর বিশেষ অংশগুলি চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরন, শিশু মৃত্যুহার কমানো, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন। এই প্রতিটিই বিষয়ই ভারতের গ্রামীণ উন্নয়নের অংশরূপে সাম্প্রতিককালে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদেশে গ্রামীণ উন্নয়নের একটি সর্বজনীন চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। এই উদ্দেশেই অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ উন্নয়ন' (Inclusive rural development) কর্মসূচী গ্রহণ হয়েছে। বিস্তৃত পরিপ্রেক্ষিতে, অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ উন্নয়ন হল গ্রামীণ সমাজের সকল সদস্যের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ উন্নয়নের তিনটি ভিন্ন কিন্তু আন্তঃসম্পর্কিত মাত্রা রয়েছে।
i. অর্থনৈতিক মাত্রা (Economic dimension) : অর্থনৈতিক মাত্রা দরিদ্র এবং নিম্ন আয়ের পরিবারের আর্থিক ক্ষমতায়নের তথা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথকে নির্দিষ্ট করে।
ii. সামাজিক মাত্রা(Social dimension) : সামাজিক মাত্রা দরিদ্র এবং নিম্ন-আরের পরিবারের সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নকে উন্নীত করে এবং দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে।
iii.রাজনৈতিক মাত্রা (Political dimension) : রাজনৈতিক মাত্রা গ্রামীণ এলাকায় পরিত্র ও নিম্ন আয়ের জনগণের জন্য গ্রামীণ পর্যায়ে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কার্যকরী অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করে।
এই তিনটি মাত্রার সমন্বিত রূপই হল অন্তর্ভুক্তিমূলক গ্রামীণ উন্নয়ন।
ভারতে গ্রামীণ উন্নয়নের প্রাথমিক লক্ষ্যগুলি নিম্নরূপ :
I.খাদ্য, বাসস্থান, বস্ত্র, কর্মসংস্থান এবং শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
II.গ্রামীণ এলাকায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং দারিদ্রা হ্রাস করা।
iii. সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রশাসনিক কাজে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিকল্পনা ও উন্নয়নে জনগণকে জড়িত করা।
iv. সমাজে বন্টনমূলক ন্যায়বিচার এবং সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা। গ্রামীণ অঞ্চলের উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলিকে প্রধান দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। প্রথমটি হল অর্থনৈতিক ও দ্বিতীয়টি হল সামাজিক।
অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য :
I.গ্রামাঞ্চলে কৃষিকার্যের উন্নয়ন তথা খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি।
II.ক্ষুদ্র শিল্প ও বৃহৎ শিল্প স্থাপন ও উন্নয়ন।
iii. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি।
iv. বেকারত্ব হ্রাস।
V.আয় বৃদ্ধি।
vi. দারিদ্র্য হ্রাস।
vii. ঋণদান।
viii. সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার।
সামাজিক উদ্দেশ্য :
ix. প্রাথমিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পয়ঃপ্রণালি, শিক্ষা, রাস্তাঘাট, পানীয় জল) পূরণ করা
x. সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলির পুনর্গঠন।
xi. কুসংস্কার দূরীভূতকরণ।
গ্রাম উন্নয়নে বর্তমানে স্থানীয় (Local Level Planning) বা বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনা (Decentralized planning) গ্রহণ করা হয়। বিকেন্দ্রীভূত পরিকল্পনার ফলে গ্রামের মানুষের প্রকৃত অসুবিধাগুলি সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়, যার ফলে প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ উন্নয়ন সম্ভব হয়।
গ্রামীণ উন্নয়নের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Rural Development) 2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল কৃষিক্ষেত্র। ভারতের গ্রামগুলিতেই
প্রধানত কৃষিকার্য হয়। ভারতের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, জ্বালানি, আবাসন প্রভৃতির চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দেশের সম্পদের পরিমাণ সীমিত। এছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই এই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার জন্য উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ খুবই প্রয়োজনীয়। তবে সাম্প্রতিককালে নগরায়ণের প্রভাবে ভারতের গ্রামগুলি আধুনিক হয়ে উঠছে ও বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ব্যবস্থার অঙ্গ হয়ে উঠছে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও গ্রামীণ উন্নয়ন এখনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূলে রয়েছে। দেশের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীল এবং গ্রামীণ ভারতের এক-তৃতীয়াংশ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। অতএব, সরকারের পক্ষে উৎপাদনশীল হওয়া এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতবর্ষের গ্রামীণ অঞ্চলে আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই সকল গৃহীত প্রকল্পগুলির মধ্যে যে ক্ষেত্রগুলিকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলি নিম্নরূপ :
গ্রামীণ শিক্ষার উন্নয়ন।
ii. গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য ও পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থার উন্নয়ন।
iii. নারীর ক্ষমতায়ন।
iv. গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন।
v. কৃষির সম্প্রসারণ ও গবেষণার সুবিধা বৃদ্ধি। vi. সহজ ঋণের প্রাপ্যতা।
vii. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি।
0 Comments