Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল (Durgapur Industrial Region)

 দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল (Durgapur Industrial Region)



দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (1956-61) দুর্গাপুরে সম্পুরিত (integrated) লৌহ ইস্পাত শিল্প স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই শিল্পাঞ্চলের যাত্রা শুরু হয়।

 অবস্থান (Location) : কলকাতার প্রায় 160 কিমি উত্তর-পশ্চিমে বর্ধমান জেলায় দুর্গাপুর শহরকে কেন্দ্র করে শিল্পাঞ্চলটি গড়ে উঠেছে। দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গের একটি পরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল । কালা-সম্পদের নিকটবর্তী অবস্থান ও দুর্গাপুরের লৌহ ইস্পাত শিল্পের ওপর নির্ভরতার কারণে দুর্গাপুরে যে শিল্প সমাবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তাকে জার্মানির কড় (Ruhr) অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করে, দুর্গাপুরকে "ভারতের রূঢ়" (Ruhr of India) বলা হয়। 

এখানে উল্লেখ্য যে— 

(1) জার্মানির রূঢ় অঞ্চলে যেমন প্রচুর উৎকৃষ্ট মানের কয়লা পাওয়া যায়, দুর্গাপুর এবং রানিগঞ্জেও তেমনি যথেষ্ট উৎকৃষ্ট মানের কয়লা পাওয়া যায়। 

(2) কয়লাকে কেন্দ্র করে রূঢ় এলাকাটি লোহা ও ইস্পাত শিল্পের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। দামোদর উপত্যকার দুর্গাপুরও লোহা ও ইস্পাত শিল্পের জন্য বিখ্যাত। 

(3) লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে কেন্দ্র করে যেমন বাড় উপত্যকায় শিল্পের সমাবেশ ঘটেছে, দুর্গাপুরেও ঠিক তেমনি লোহা ও ইস্পাত শিল্পকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প গড়ে উঠেছে।


 শিল্পাঞ্চলটি গড়ে ওঠার কারণ (Factors of growth) 

(1) রানিগঞ্জের কয়লা, 

(2) দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার বিদ্যুৎশক্তি, 

(3) ওড়িশার আকরিক লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, চুনাপাথর, 

(4) পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও বিহার থেকে আগত প্রচুর সুলভ শ্রমিক,

 (5) জলপথ, সড়কপথ ও পূর্ব রেলপথের সুবিধা এখানে বহু শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

শিল্প সমাবেশ (Industrial agglomeration) : এখানকার শিল্পগুলির মধ্যে (1) লোহা ও ইস্পাত, (2) কোক-কয়লা ও কয়লা থেকে নানাবিধ উপজাত দ্রব্য, (3) চশমার লেন্স প্রস্তুত, (4) সার কারখানা, (5) সিমেন্ট কারখানা ইত্যাদি প্রধান।


সমস্যা (Problems) : দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হল-
(i) দুর্গাপুরে অবস্থিত অধিকাংশ সরকার পরিচালিত সংস্থা (public sector undertakings), যেমন মাইনিং অ্যান্ড অ্যালায়েড মেশিনারি (MAMC) নামক সংস্থা, শুধুমাত্র সরকারের দেওয়া অর্ডার সাপ্লাই-এর মাধ্যমে ব্যাবসা পরিচালনার যে প্রক্রিয়া তৈরি করেছিল, তার সঙ্গে বাজারের চাহিদা বা ওঠাপড়া কোনও সম্পর্ক না থাকায়, এই সংস্থাগুলি খুব তাড়াতাড়ি রুগ্ন সংস্থায় পরিণত হয় এবং কিছু সংস্থা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রেও “ইনোভেশন” (innovation) বা নতুন চিন্তা ও প্রয়োগের অভাব ছিল। ফলে সেই কোম্পানিগুলিও বন্ধ হয়ে যায়। যেমন ACC ভাইকার্স
ব্যাবকক নামক সংস্থা।
(ii) দুর্গাপুরের সংস্থাগুলি বিদেশে রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নীতিগত বা অর্থনৈতিক সাহায্য পায়নি যদিও দেশের ভিতরে বা রাজ্যের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ ও বন্ধের রাজনীতির কবলে কোম্পানিগুলি কয়েক দশক ধরে ধীরে ধীরে
অলাভজনক হয়ে ওঠে।
(iii) ফ্রেট ইয়োকালাইজেশন পলিসি (Freight Equalization Policy - FEP)-র নেতিবাচক প্রভাবে ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের খনিজ দ্রব্য নির্ভর শিল্প ও অর্থনীতি মার খায়। দুর্গাপুর তার ব্যতিক্রম নয়। (iv) দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার আধুনিকীকরণে দেরি হওয়ার ঘটনাও দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে তার উন্নতির লক্ষ্যে পৌঁছাতে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটিয়েছে।
 সম্ভাবনা (Prospects) : 

(i) দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানা রেলের হুইল এবং অ্যাক্সেল (wheel and axle) উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন করেছে। ভারতে আগামী দিনে যে দ্রুতগামী ট্রেন চলবে বা চলা শুরু হয়েছে (যেমন— বেসরকারি উদ্যোগে তেজস এক্সপ্রেস), সেই আধুনিক কোচ বা বগিগুলির উপযুক্ত হুইল, অ্যাক্সেল ও অন্যান্য সহযোগী যন্ত্রাংশ নির্মাণে “ডাইভারসিফিকেশন” দরকার। অর্থাৎ প্রচলিত ছকের বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন ক্ষেত্র ও নতুন ধরনের মূল্য-যুক্ত দ্ৰব্য (Value added products) উৎপাদন করার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য “গবেষণা ও উন্নয়ন" (Research and Development - RD) ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে হবে। 

(ii) “বেঙ্গল এরোট্রোপলিস” নামক প্রকল্পটি দুর্গাপুরের কাছে গড়ে উঠছে। এটি আধুনিক শহর হবে। শহরটি নতুন প্রযুক্তি ও চাহিদা তৈরি করবে। 

(iii) দুর্গাপুরে IT হাব গড়ে উঠছে। এখানে নিযুক্তির সম্ভাবনা যথেষ্ট। 

(iv) দুর্গাপুরে কারিগরি কলেজ রয়েছে। সুতরাং শিক্ষিত প্রযুক্তি-দক্ষ শ্রমিকের অভাব নেই। 

(v) MSME উদ্যোগকে শক্তিশালী করা দরকার। তবেই শিল্পে স্বনির্ভরতা তৈরি হবে।


Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code