সমস্থিতিবাদের ধারণা// এইরির তত্ত্ব //isostacy concept and law of flotation theory by airy
ধারনাঃ পৃথিবীর উপরিভাগে অবস্থিত বিভিন্ন ভূমিরূপগুলি (যেমন - পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, হ্রদ, সাগর, মহাসাগর প্রভৃতি) পারস্পরিক এক সুনির্দিস্ট নীতির সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের উপরে ভারসাম্য অবস্থায় রয়েছে। পৃথিবীর ভূমিভাগের উত্থিত ও নিমজ্জিত অংশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার এই ঘটনাকে সমস্থিতি বা Isostasy বলা হয়।
ব্যুৎপত্তিগত অর্থঃ 'Isostasy' শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ 'Isos' অর্থে সমতা বা সমান এবং 'Stasis' অর্থে নিশ্চল বা স্থির থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ১৮৮৯ সালে, আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ ক্ল্যারেন্স এডওয়ার্ড ডাটন সর্বপ্রথম 'Isostasy' শব্দটি ব্যবহার করেন।
সংজ্ঞাঃ
Isostasy বলতে বোঝায় -- "the state of gravitational equilibrium between Earth's crust and mantle such that the crust 'floats' at an elevation that depends on its thickness and density." ভূত্বকের বিভিন্ন অংশের, বিভিন্ন উচ্চতায়, ভূমিভাগের উত্থিত ও নিমজ্জিত অংশের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে অবস্থান করাকে সমস্থিতি বলে। "ISOSTACY simply means a mechanical satbility between upstanding parts and lowlying basins on arotating earth"
মূল তত্ত্ব ঃ সমস্থিতির মূল ধারনাটি হল -- পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ অর্থাৎ পর্বত, মালভূমি প্রভৃতি নিম্ন অঞ্চলগুলি অর্থাৎ সাগর, মহাসাগর প্রভৃতি -এর সাথে সমতা বজায় রেখে অবস্থান করছে। ভারী মহাসাগরীয় স্তর ( Sima) এর উপর হালকা মহাদেশীয় স্তর (অর্থাৎ Sial) অবস্থান করছে। মহাদেশীয় স্তর মহাসাগরীয় স্তরের চেয়ে অপেক্ষাকৃত হালকা হওয়ায়, মহাদেশীয় স্তর বেশি উচ্চতায় অবস্থান করে। পৃথিবীর স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে সমস্থিতির বাস্তবিক প্রমাণ দেখা যায়।
সমস্থিতির তত্ত্বসমূহঃ-
সমস্থিতি সংক্রান্ত প্রধান দুটি তত্ত্ব হল -- (১) জর্জ এইরির সমস্থিতি মতবাদ (১৮৫৫) ভাসমানতার তত্ত্ব এবং
(২) জন প্র্যাটের সমস্থিতি মতবাদ (১৮৫৯) প্রতিপুরন তলের ধারণা
জর্জ এইরির সমস্থিতি মতবাদ (১৮৫৫) ভাসমানতার তত্ত্ব
প্রধান ভিত্তিঃ ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জর্জ এইরি পদার্থের ভাসমানতার উপর নির্ভর করে ( law of flotation) তাঁর সমস্থিতি মতবাদ প্রকাশ করেন।
মূল ধারণাঃ এইরির ধারণা অনুসারে , হালকা ও কম ঘনত্বযুক্ত Sial, ভারী ও অধিক ঘনত্বযুক্ত Sima -এর উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। সাধারনত পদার্থ গুলি নিমজ্জিত অংশের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে ভাসমান অংশের দৈর্ঘ্য সমানুপাতিক হয় । হিমশৈল যেমন জলে ভাসমান থাকে, অর্থাৎ সমুদ্রতলের উপরে কোনো পর্বতের উচ্চতার ৯ গুণ ভূত্বকের গভীরে প্রবেশ করে রয়েছে। ১/১০ অংশ জলের উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে , ৯/১০ জলে ডুবে থাকে। ভূত্বকের নিচে যে অঞ্চলের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের সুউচ্চ পর্বতের উচ্চতা পরিপূরণ করা হয়, তাকে শিকড় অঞ্চল বা Root Zone বলে। এই তত্ত্ব অনুসারে কোনো পর্বত তার উচ্চতা ভূত্বকের নিচে আঞ্চলিক ভাবে পরিপূরণ করে থাকে। এই সমস্থিতি পরিপূরণ নির্ভর করে উদক জনিত সাম্যতার উপর।
এইরির মতে পর্বত মালভূমি , সমভূমি - মহাদেশীয় ভূতত্ত্বের এই বিভিন্ন অংশগুলি ভাসমানতার নিয়মানুসারে বিভিন্ন উচ্চতায় ভারসাম্যযুক্তভাবে অবস্থান করে, পর্বত অনেক উঁচুতে অবস্থান করায় নিম্নে এর শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং সমভুমিতে স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট হওয়ায় নিম্নে স্বল্প গভীরতা হয়ে থাকে।
সমালোচনা
এইরি এই তত্ত্ব অনুসারে কিছু দুর্বলতা রয়েছে।
হিমশৈলের ভাসমানতার নিয়ম অনুসারে হিমালয় নিম্নভাগে ৭৯.৬৩২ মিটার গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। ভু অভ্যন্তরে ৩০-৩২ মিটারে ১ ডিগ্রি হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলে ৭৯৬৩২ মিটার গভীরতায় যে কোন বস্তু গলে যাবে।
জন প্র্যাটের সমস্থিতি মতবাদঃ-
প্রধান ভিত্তিঃ ১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন হেনরি প্র্যাট প্রতিবিধানের নিয়ম অনুসারে (law of compensation) তাঁর সমস্থিতি মতবাদ প্রকাশ করেন।
মূল ধারণাঃ এই তত্ত্ব অনুসারে, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি ভূত্বকীয় স্তম্ভগুলির ঘনত্ব সমান নয়। ভূপৃষ্ঠের যে অংশের উচ্চতা যত বেশি হবে, তার ঘনত্ব তত কম হবে এবং ভূগর্ভে ওই সমস্ত অঞ্চল একটি নির্দিষ্ট স্তরে বা তলে মিলিত হয়, যা পরিপূরক স্তর / প্রতিবিধান তল বা Compensation Level নামে পরিচিত। ভূত্বকীয় স্তম্ভগুলি ওই প্রতিবিধান তলে সমান চাপ প্রয়োগ করলেও তাদের ঘনত্বের পার্থক্যের জন্য সমুদ্রতলের উপরে স্তম্ভগুলির উচ্চতায় পার্থক্য ঘটে। যেমন পর্বতের গঠনকারী শিলার ঘনত্ব কম বলে, তার উচ্চতা বেশি। এরপর মালভূমি, সমভূমি ও সমুদ্র তলদেশের ঘনত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে বলে, তাদের উচ্চতাও ক্রমশ কমে যায়। এইরূপে সমস্থিতির ভারসাম্য ঘটে থাকে। বিজ্ঞানী প্র্যাট তাঁর তত্ত্ব কতকগুলি ভিন ঘনত্ব যুক্ত ধাতব ব্লক পারদে ভাসমানতার সাহায্যে প্রমান করেন।
JOIN OUR TELEGRAM CHANNEL
0 Comments