উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলঃ - জনসংখ্যা ও জনবসতি// HS GEOGRAPHY : POPULATION AND SETTLEMENT PART 2
জিওগ্রাফিয়াতে স্বাগতম। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা আর বেশী দেরি নেই। তাই পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে জিওগ্রাফিয়া থেকে এক নতুন সিরিজ চালু করা হচ্ছে যেখানে প্রতিদিন প্রতিটি অধ্যায় ধরে ধরে প্রশ্ন এবং সপ্তাহের শেষে একটি মক পেপার দেওয়া হবে যা ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের বিশ্লেষণ করতে সুবিধা হবে।
নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর দাও। ( ১ নম্বর )
সংশোধিত সিলেবাস অনুসারে এই অধ্যায় থেকে ৩ নম্বর MCQ আসবে । সুতরাং ভালো নম্বর পেতে হলে বই রিডিং দেওয়া ভীষণ জরুরি ।
নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১) ভারতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কি?
-ভারত বর্তমানে পৃথিবীর দ্বিতীয় জনবহুল দেশ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৭ % ভারতেই বসবাস করে, তাই পৃথিবীর প্রতি ৬ জন মানুষ প্রতি এক জন ভারতীয়। ভারতের জনসংখ্যা স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে ও সেই বৃদ্ধির ধারা এখনো বজায় রয়েছে এবং অনুমান করা হচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত চিন কে পেড়িয়ে পৃথিবীর জনবহুল দেশে পরিনত হবে। ভারতের এই ক্রমবর্ধমান হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ গুলি সম্পর্কে বর্ননা করা হল ।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রধানত তিনটি কারনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় - জন্মহার, মৃত্যুহার ও পরিব্রাজন। আবার কোন অঞ্চলে জন্মহার, মৃত্যুহার কীরূপ হবে তা বেশ কয়েকটি কারনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। সেই নিয়ন্ত্রক তথা কারণ গুলি নিচে তুলে ধরা হল ।
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
1।কৃষিনির্ভর সমাজ - ভারত কৃষি নির্ভর দেশ । দেশের প্রায় ৬৫% মানুষ এই কৃষি কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। আর কৃষিতে প্রয়োজন পড়ে প্রচুর শ্রমিকের । তাই কৃষি নির্ভর পরিবার গুলিতে কৃষিতে শ্রমিকের সরবরাহ করার জন্য বেশি জন্মদানের প্রবনতা দেখা যায়।
2।প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার আধিক্য- ভারতে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি আর এই প্রাপ্ত বয়স্ক জনসংখ্যার প্রজনন ক্ষমতা বেশি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের জনসংখ্যায় অনেকটাই বেশি ।
3।বেকারত্ব ও দারিদ্রতা - ভারত একটি কৃষিনির্ভর উন্নয়নশীল দেশ । এখানে শিল্পের বিকাশ এখনো তেমন ভাবে সম্ভব হয় নি। তাই মানুষের কাজের সুযোগ কম বলে বেকারত্ব তথা দারিদ্রের হার অনেক বেশি। বেকারত্বের জন্য মানুষ বেশি অবসর সময় বারিতেই থাকে আবার দারিদ্রতার জন্য মানুষের অন্য কোন আনন্দ বা বিনোদনের মাধ্যমও থাকে না।তাই ভারতে দারিদ্রতা ও বেকারত্ব ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
4।চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি - স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ভারতে চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। ফলে ম্যালেরিয়া, কলেরা, গুঁটি বসন্ত এই সব রোগে আগে প্রচুর মানুষ মারা যেত, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি মৃত্যুহার কে কমিয়ে দিয়ে জনসংখ্যায় বৃদ্ধি তে সহযোগিতা করেছে।
5।খাদ্য বা পুষ্ঠির সরবরাহ - স্বাধীনতা আগে প্রচুর মানুষ খাদ্যের অভাবে অপুষ্ঠি জনিত কারণে মারা যেত, কখনো কখনো দুর্ভিক্ষ দেখা যেত, তখন অনেক মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যেত কিন্তু ১৯৬০ এর দশকে সবুজ বিপ্লবের ফলে সকল মানুষকে খাদ্য পৌছে দেওয়া সম্ভব হয় বলে খাদ্যাভাব জনিত কারণে মানুষের মৃত্যুহার কমে যায়, মৃত্যুহারের পরিবর্তন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলে।
6।পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার অভাব - ভারতীয় জনসাধারনের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একটি বড়ো পরিবারের থেকে যে ছোট পরিবার অনেক সুখের তা মানুষ জন এখনো অনুধাবন করতে সক্ষম হয় নি। আর এই জ্ঞানের অভাব ভারতে জনসংখ্যা কে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
7।পুত্র সন্তানের আকাঙ্খা - ভারত পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় এখানে কন্যা সন্তানের তুলনায় পুত্র সন্তানের চাহিদা বেশি। এই পুত্র সন্তানের চাহিদাই ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ ।
8।শিক্ষার অভাব - ভারতে স্বাক্ষরতার হার অনেক কম, মোট জনসংখ্যার একটি বড়ো অংশ অশিক্ষিত। এই অশিক্ষিত বা নিরক্ষর জনসাধারন জন্ম নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে এখনো সঠিক ভাবে জানে না। তাই তারা জন্ম নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হয় না।
9।স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠির অভাব - আমেরিকা ও ইউরোপের মতো উন্নত দেশ গুলি তুলনায় ভারতীয় মহিলারা স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠিগত দিক থেকে অনেকটাই রোগা প্রকৃতির। আমেরিকার ওই স্বাস্থ্যবান মহিলাদের থেকে ভারতীয় মহিলারা অনেক বেশি সন্তান ধারনে সক্ষম।
10।সরকারী প্রচেষ্ঠার অভাব - চিন সরকারের মতো ভারত সরকারের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন মূলক আইন বা নীতি প্রেরনের কোন সদিচ্ছা দেখা যায় না। তাই ভারতের জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
11 । বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহ - ভারতীয় সমাজের সর্বত্র এখনও শিক্ষার আলো পৌছায় নি তাছাড়া ভারতীয় সমাজে মেয়েদের স্বাধীনতা কম বলে তাদের মতামত না নিয়েই খুব অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় আবার কোন কোন ধর্মে বহুবিবাহ কে মান্যতা দেওয়া হয় বলে জন্মহার বেড়ে গিয়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়।
আরো পড়ুন উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলঃ - জনসংখ্যা ও জনবসতি// HS GEOGRAPHY : POPULATION AND SETTLEMENT here
ব্যাপক কৃষি রপ্তানি ভিত্তিক হওয়ার কারণ কি?
বিশ্বের যে সমস্ত অঞ্চলে জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব কম এবং কৃষি জমির পরিমাণ বেশি, সেখানে প্রচুর মূলধন,ন্যূনতম শ্রম ও কারিগরি কৌশলের সাহায্যে যে বৃহদায়তন কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়, তাকে ব্যাপক কৃষি বলে। যেমন উত্তর আমেরিকার কানাডা, ইউরোপের রাশিয়া, ইউক্রেনের এই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
ব্যাপক কৃষি রপ্তানি ভিত্তিক হওয়ার কারণ হল
১) প্রধান লক্ষ্য:- উৎপাদিত কৃষিজ ফসল বাজারে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা হচ্ছে এই কৃষির প্রধান লক্ষ্য।
২) স্বল্প জনবসতি :- নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত স্বল্প বসতি যুক্ত অঞ্চলে গড়ে উঠেছে।
৩) জমির আয়তন:- স্বল্প বসতি হওয়ার জন্য এখানে মাথাপিছু জমির আয়তন বেশী ফলে। উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণ বেশি। যা রপ্তানিতে সাহায্য করে।
৪) আধুনিক প্রযুক্তি:- প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে।
৫) বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন:- বৈদেশিক বাজারে বিক্রি করার ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
উপরোক্ত কারণ গুলির জন্য ব্যাপক কৃষি রপ্তানি ভিত্তিক হয়।
*************†****†**†*************************************************************
জনবিবর্তন তত্ত্ব উচ্চমাধ্যমিক
0 Comments