Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

পায়ে পায়ে পুরুলিয়ার পথ চলা


পায়ে পায়ে পুরুলিয়ার পথ চলা


 পায়ে পায়ে পুরুলিয়ার পথ চলা 




" গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ / আমার মন ভুলায় রে .... ।"


দিগন্তের বনানীর নীলরেখায় প্রান্তরের হরিৎক্ষেত্রের বিস্তার আর মিলনের প্রান্তরেখায় রাগিনীর সুর । সেই সুরের মোহে পা বাড়িয়ে দেওয়া চলার পথের সাথে সাথে চলেছি অজানা -- অচেনার টানে । অদেখাকে দেখা অজানাকে জানা আর দুর্জ্ঞেয় কে জ্ঞানের সীমায় আনতে আমাদের স্ফুতি , আবেগকে মেলে ধরি আকাশপানে । 'দেহ মনের সুদূর পারে ' আপনারে হারিয়ে ফেলার মধ্যে চাঞ্চল্য অনুভূতিকে নিয়ে এগিয়ে চলি বারে বারে দিকে দিগন্তরে । সেই নিয়েই আমাদের চলা -- স্বাধীনভাবে নতুন করে চলা ।



" পুরুলিয়া " --- নামটি শুনেই প্রথমে মনে হয় যেন রুক্ষ -- শুষ্কতায় ভরা একটা চিররৌদ্র দেশ । কিন্তু বাংলার মাটিতে এমন স্বাধীনতায় জ্বাজ্বল্যমান জেলা সত্যিই চোখে পড়ার মতো । বাংলার পর্যটন - এ বাঁকুড়া - বিষ্নুপুর - শান্তিনিকেতন । সুন্দরবন আর দার্জিলিং -- এর কথাই মনে পড়ে । কিন্তু পশ্চিমের এই রাজ্যটি পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক মানচিত্রে খরা প্রবণতায় জেলায়নে উঠে আসে । তবুও পুরুলিয়ার চিররুক্ষতায় মাঝে আনন্দময় সরসতার কথা খুব কমই দেখা যায় ।



হুগলী থেকে বাসে আরামবাগ হয়ে যাওয়া " পুরুলিয়া " --- পশ্চিমের একটি জেলা । ছোট ছোট পাহাড় সমন্নিত , টিলাপরিপূর্ণ পাহাড়ের গায়ে ঢালু ভূ - ভাগে সবুজ - সম্ভারে পুরুলিয়া এখন সবুজময় । পাহাড়ী জঙ্গল আর ছায়াঘেরা পাহাড়ী পথে পথচলার একটা আনন্দ । চারিদিকে কোথাও ঝোপঝাড় ? রাস্তার দুধারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রাম । বিস্তীর্ণ হলুদ প্রান্তরের মাঝে মাঝে ওঠা গুল্ম ও গাছের সারি । তারই মাঝে আবার কোথাও ধানজমি । সাঁওতালি গ্রামগুলির মধ্যে মধ্যে মাটির কুঁড়েঘর আর গবাদি পশুর আবাস । " পুরুলিয়া" র সবচেয়ে বড় আকর্ষন অযোধ্যা পাহাড় । বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তরের বহু পর্যটক আসেন এই পুরুলিয়া রাজ অযোধ্যা দর্শনে । তবে এ অযোধ্যা শ্রীরামভবন নয় , ছোটনাগপুর মালভূমির একটা অংশ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে বুক চিতিয়ে । পাহাড়ের গায়ে ঘুরন্ত রাস্তার উপর দিয়ে ওপরে ওঠা যায় । তবে বর্তমানে পর্যটকদের সুবিধার্থে গাড়ি-র চলাচল রয়েছে । অযোধ্যার পারে অযোধ্যা গ্রাম , রামমন্দির , রিজার্ভার আর সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ " বামণী " ঝর্ণা । জানা গেল , ভৌমজল চক্রের ক্রিয়ায় এই জল শিলাস্তর থেকে ঝর্ণা আকারে নির্গত হয় । অপরূপ শোভাময় জলধারা আর একটানা শব্দে সেই জঙ্গলঘেরা পাহাড়ের আবছায়ায় পত্রকানন মর্ম্মরতায় প্রকৃতির সঙ্গে নিঃশ্বাসে এক অপরূপ সুরমূর্ছনার সৃষ্টি করে । গোধূলীবেলায় পাহাড়ের নীচে গ্রাম - আর গ্রামের মাঝে সান্ধ্যমেলা বসে । এখানে পুরুলিয়ার বিখ্যাত ছৌঁ মুখোশ পাওয়া যায় , পুরুলিয়ার আর একটি দিক পুরুলিয়ার শহর । এই জায়গাটি পুরুলিয়ার একটি কেন্দ্রীভূত অঞ্চল । এখানেই পুরুলিয়া পৌরসভা , ব্যাঙ্ক , স্কুল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলি রয়েছে । এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল " সাহেব বাঁধ " । 



ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই সাহেববাঁধের জল আর জলের মাঝে জঙ্গল ঘেরা একটা ছোট্ট দ্বীপ । শোনা যায় -- ব্রিটিশ শাসনকালে এই সাহেববাঁধ নির্মিত হয়েছিল । বর্তমানে এটি বাংলার " ন্যাশনাল হেরিটেজ " হিসাবে খ্যাত । যাইহোক , পুরুলিয়া গ্রাম , অযোধ্যা , সাহেববাঁধ নিয়ে আমাদের যাত্রা । তবুও বর্তমানদিনে নগরায়ণ ও শিল্পায়ণের গ্রাসে বাংলার বঙ্গভূমি অনেকটাই চিরপরিচিতের পরিচয় করিয়েছে । বামণী ঝর্ণা , সাহেব বাঁধের জলে দূষিত পদার্থ , যত্রতত্র হোটেল ব্যবসার কবলে দূষণ , পানীয় জলসংকট , জনসংখ্যার চাপ " অযোধ্যা" মন্ডিত পুরুলিয়াকে গ্রাস করেছে । তবু বাংলার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখে আনন্দময় ভ্রমণের সাথে সাথে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা'র সঙ্গে " বাংলার পর্যটন " -- কে সুন্দররূপে সাফল্যমন্ডিত করে তুলি --- এই আমার -- আমাদের সবার --- সকলের ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় অঙ্গীকার ।




" আমাদের যাত্রা হল শুরু /

যখন ওগো কর্ণধার  /

তোমারে করি নমস্কার " ।



প্রসাদ সাঁতরা ।

জিওগ্রাফিয়া 


Reactions

Post a Comment

1 Comments

Ad Code