Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

ওড়িশার জলবায়ু : নিয়ন্ত্রক,জলবায়ুর পরিবর্তন , জলবায়ুর ঝুকি

ওড়িশার জলবায়ু 

ওড়িশার জলবায়ু : নিয়ন্ত্রক,জলবায়ুর পরিবর্তন , জলবায়ুর ঝুকি


ওড়িশার জলবায়ু : নিয়ন্ত্রক,জলবায়ুর পরিবর্তন , জলবায়ুর ঝুকি

 

ওড়িশার জলবায়ু সত্যিই বৈচিত্র্যপূর্ণ৷ এই রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চল ক্রান্তীয় উষ্ণ মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত৷ উচ্চ তাপমাত্রা, উচ্চ আদ্রতা, মাঝারি থেকে উচ্চ বৃষ্টিপাত এবং সংক্ষিপ্ত ও হাল্কা শীত এই রাজ্যের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য৷ কোপেনের জলবায়ুর শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে ওড়িশার বেশিরভাগ অংশ ক্রান্তীয় সাভানা জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত৷ ওড়িশার জলবায়ু লক্ষণীয়ভাবে ওড়িশার ভূপ্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত৷

ওড়িশার জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক ––––

         ওড়িশা ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত হলেও সর্বত্র তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত সমান নয়৷ ঋতুভেদেও এদের তারতম্য লক্ষ করা যায়৷ এই তারতম্য কতকগুলি নিয়ন্ত্রকের ওপর নির্ভরশীল৷

  1. সমুদ্রের প্রভাব —— ওড়িশা পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য যা বঙ্গপসাগরের উপকূলে অবস্থিত হওয়ায় সমুদ্র দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত৷ সামুদ্রিক পরিবেশের দরুন জলবায়ু কিছুটা সমভাবাপন্ন৷ শীত ও গ্রীষ্মে তাপমাত্রার পার্থক্য কিছুটা কম৷ দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য যথেষ্ট লক্ষনীয়৷

  2. ভূপ্রকৃতি —— মালভূমির অবস্থানের দরুন মালভুমি অঞ্চলে তাপমাত্রার চরমতা লক্ষ করা যায়৷ আবার পূর্বঘাটের পাহাড় পর্বতমালার অবস্থানের জন্য এখানে তাপমাত্রা খুব বেশি হয় না৷ 

ওড়িশার ঋতুচক্র —––– 

         ঋতুভেদে ওড়িশার জলবায়ুর যে পার্থক্য দেখা যায় তার ওপর ভিত্তি করে ঋতু পর্যায়কে ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা – ১. গ্রীষ্মকাল, 2. বর্ষাকাল, ৩. শীতকাল 

১. গ্রীষ্মকাল (মার্চ-জুন) —— ওড়িশায় গ্রীষ্মের তাপমাত্রা পারদকে অসহনীয় উচ্চতায় উন্নীত করে৷ এখানে                                                                                                                  গ্রীষ্মের মরসুম মার্চ মাসে শুরু হয় এবং জুন মাস পর্যন্ত চলতে থাকে৷ এই সময় তাপমাত্রা বেশ বেশি এবং প্রখর রৌদ্র থাকে৷ ওড়িশার পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০°-৪৬° সে. মধ্যে থাকে৷ উপকূলীয় জেলাগুলিতে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ৷ এখানে গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫°-৪০°সে. এর মধ্যে থাকে৷

২. বর্ষাকাল (জুলাই-সেপ্টেম্বর) –––– গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিন্মচাপের সৃষ্টি হয়৷ তখন সেই জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে ওড়িশায় প্রবেশ করে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়৷ ৫ই জুন থেকে ১০ই জুনের মধ্যে ওড়িশার উপকূলীয় সমভূমিতে এই বায়ুর আগমন ঘটে৷ ১লা জুলাই এর মধ্যে পুরো রাজ্য দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে চলে আসে৷ এই সময়টিতে ওড়িশায় বর্ষাকাল চলে৷ জুলাই মাসে এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়৷ এই রাজ্যে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪৫১.২ মিলিমিটার৷ এই রাজ্যের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৭৫%-৮০% বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে৷ বর্ষার সময় কিউমুলোনিম্বাস মেঘগুলি প্রবল বৃষ্টিপাতের সাথে উদ্ভাসিত হয় যা ভূখণ্ডগুলি ধুয়ে দেয় এবং একটি সমৃদ্ধ নীল আকাশকে উদ্ভাসিত করে৷ অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি এই অঞ্চল থেকে সরে যায়৷ বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় প্রায় প্রতিবছর এখানে সংঘটিত হয়৷ এই সময় প্রায়ই বঙ্গপসাগর থেকে ঘূর্ণিঝড়ের উদ্ভব ঘটে যার ফলে রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলগুলি সাধারণত এই মরসুমে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডো অনুভব করে৷ বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলের কৃষিতে মুখ্য ভুমিকা পালন করে যা ওড়িশার জনগোষ্ঠীর জীবিকার প্রধান উৎস৷ 

৩. শীতকাল ( অক্টোবর-ফেব্রুয়ারী) ––––– ওড়িশায় শীতের মরসুমটি প্রায় ৫ মাস স্থায়ী হয় অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত৷ এই সময় আবহাওয়া হিমশীতল থাকে এবং সর্বনিন্ম তাপমাত্রা প্রায় ৭° সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ এখানে শীতকাল প্রায় শুষ্ক থাকে৷

এছাড়াও এই রাজ্যটিতে সতেজ বসন্ত ও স্নিগ্ধ শরতের তুলনামূলকভাবে হালকা আভাস লক্ষ করা যায়৷ জলবায়ুর প্রকারের ভিত্তিতে ওড়িশা কে দশটি কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে৷

ওড়িশা — জলবায়ুর পরিবর্তন : ——— 

             ওড়িশা বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত যেখানে আবহাওয়া তার রূপ গঠন করে৷ সুতরাং সমুদ্রের আচরণে সামান্য পরিবর্তন উপকূলে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে ফলে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়৷ উপসাগরীয় অঞ্চল তখন নিন্মচাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ফলস্বরূপ উপসাগরীয় অঞ্চল বিশেষত ওড়িশায় ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়৷ এইরূপ ঘূর্ণিঝড় এবং নিন্মচাপ হাজার হাজার কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং ওড়িশার বায়ুমণ্ডল ও গ্রহীয় সঞ্চালন প্রণালীর মধ্যে সংযোগ গঠন করে৷ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের মত জলবায়ুর মূল পরিমিতিগুলি অনুসরণ করে ওড়িশার জলবায়ু আর খারাপ ও পরিবর্তিত হতে থাকে৷ 

                                  



ওড়িশা – জলবায়ুর ঝুকি : ——

  • ওড়িশায় বৃষ্টিপাতের প্রবল পরিবর্তনশীলতা, ওড়িশায় বসবাসকারী মানুষকে খাদ্য ঘাটতিতে ফেলে৷

  • পশ্চিম ওড়িশায় বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তার কারণে প্রতি ৫-৬ বছরে বৃহৎ খরা লক্ষ করা যায়৷

  • বর্ষাকালে হড়কাবান৷

  • গরমকালে উষ্ণ সমুদ্রতরঙ্গ৷

  • তীব্র উপকূলীয় বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়৷

@গার্গী দাস
@জিওগ্রাফিয়া

Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code