World Rainforest Day: কাকে বলে বৃষ্টি অরণ্য?
নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত (বার্ষিক 200-250 সেমি) এবং পর্যাপ্ত উষ্ণতার (গড় উষ্ণতা 27°C) প্রভাবে যে ঘন নিবিড় অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই অরন্যের অবস্থান বলে এবং এই অরন্যের গাছগুলির পাতা সারাবছর সবুজ থাকে বলে, একে নিরক্ষীয় চিরহরিৎ অরণ্য বলা হয়।
২০১৭ সালে রেইনফরেস্ট পার্টনারশিপ নামক সংস্থা এই দিবসটি পালনের কথা বলে৷ সেই থেকে প্রতি বছর তারিখটি বিশ্ব বৃষ্টি অরণ্য দিবস রূপে পালিত হয়ে আসছে।
এই দিবস পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হল জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রায় বৃষ্টি অরণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বৃষ্টি অরণ্য সুরক্ষিত করা, যে-অরণ্যাঞ্চল ইতিমধ্যেই বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে তা পুনরুদ্ধার করা।
বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবসের মূল লক্ষ্য হলো, বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা এবং বিলুপ্তি রোধ করে রেইনফরেস্ট ইকোসিস্টেম (Rainforest Ecosystem) সংরক্ষণের গুরুত্বকে সমাজের সামনে তুলে ধরা। রেইনফরেস্ট হল লম্বা, বেশিরভাগ চিরহরিৎ গাছ (Evergreen Tree) সম্পন্ন অঞ্চল যেখানে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। পৃথিবীতে এমন কিছু রেইনফরেস্ট রয়েছে যার বয়স অন্তত ৭০ মিলিয়ন বছর। বিশ্বের মাত্র ৬ শতাংশ জুড়ে অবস্থান করলেও, পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি উদ্ভিদ এবং প্রাণী প্রজাতির বাসস্থান এই অরণ্যগুলিই।
বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবসের ইতিহাস । History of World Rainforest Day :
২০১৭ সালে রেইনফরেস্ট পার্টনারশিপ (Rainforest Partnership) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় 'বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবস'। জলবায়ু, জীববৈচিত্র্য, সংস্কৃতি এবং জীবিকার জন্য সুস্থ, দীর্ঘস্থায়িত্বের ভূমিকায় এই সকল অরণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরতেই এই দিবস পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ২০২১ সালে রেইনফরেস্ট পার্টনারশিপের পক্ষ থেকে 'ওয়ার্ল্ড রেইনফরেস্ট ডে সামিট' (World Rainforest Day Summit) চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা দ্বারা বিশ্বের সকল প্রকার পেশা, সম্প্রদায়, সকল প্রকার বয়সীদের একত্রিত করে বিশ্বের রেইনফরেস্টগুলি সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে এবং পরিস্থিতি বুঝে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়।
বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবস ২০২৩ এর থিম । Theme of World Rainforest Day 2023 :
চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের 'বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবসে'র থিম বা প্রতিপাদ্য হলো, 'সংরক্ষণ,পুনরুদ্ধার ও পুনর্জন্ম' (Save, Restore & Rebirth)। অর্থাৎ রেইনফরেস্টের গুরুত্ব এবং এর নিরাময় ক্ষমতাকে বোঝা। এই সকল অরণ্যগুলির সুস্থ্যতা বজায় রেখে এবং সংরক্ষণ করে কেবল উদ্ভিদ বা জীবজন্তুর জন্যই নয় আমাদের জন্যও সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এই দিবস পালনের লক্ষ্য। এই বছরের 'বিশ্ব রেইনফরেস্ট দিবসে'র আরও উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য হলো কীভাবে এই অরণ্যগুলিকে পুনরুদ্ধার এবং পুনরুত্থান করে উদ্ভিদের পুনর্জন্ম দেওয়া যায়, পাশাপাশি কৃষিকার্যের ওপরও নজর দেওয়া এবং এই নিয়ে গবেষণা করা
ভারতের বিখ্যাত রেইনফরেস্ট । India's Famous Rainforest :
গোটা পৃথিবীতে কেবল অ্যান্টার্কটিকা (Antarctica) বাদে প্রায় প্রতিটি মহাদেশেই রেইনফরেস্ট রয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম রেইনফরেস্টগুলি দক্ষিণ আমেরিকার (South America) আমাজন নদী (Amazon River)এবং আফ্রিকার কঙ্গো নদীকে (Congo River, Africa) ঘিরে অবস্থান করে রয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপ (Tropical Islands of Southeast Asia) এবং অস্ট্রেলিয়ার (Australia) বেশ কিছু অংশে বিশাল এলাকা জুড়ে রেইনফরেস্ট রয়েছে যা পৃথিবীর বৃহত্তম রেনফরেস্টের মধ্যে অন্যতম। বাকি বেশিরভাগ দেশের মতো আমাদের দেশেও অর্থাৎ ভারতেও রয়েছে একাধিক রেইনফরেস্ট। যা কেবল আমাদের দেশের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র রক্ষা করতেই নয়, হয়ে উঠেছে এক চমৎকার পর্যটন কেন্দ্রও (Tourist Center)।
১. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ । Andaman And Nicobar Islands :
ভারতের একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ বনের সর্বোত্তম উদাহরণ হলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট ক্যানোপি (Canopy) রয়েছে, যা ভারতীয়, মায়ানমার (Myanmar), মালয়েশিয়ান (Malaysia) এবং স্থানীয় ফুলের স্ট্রেনের (Local Flower Strain) উপাদানগুলির সাথে মিশ্র উদ্ভিদ দ্বারা তৈরি। রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত এখানে প্রায় ২,২০০ রকমের উদ্ভিদ পাওয়া যায়। যার মধ্যে ২০০টি স্থানীয় এবং ১,৩০০টি প্রকার উদ্ভিদ মূল ভূখণ্ডে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন প্রকার গাছপালা ছাড়াও এখানে দেখতে পাওয়া যায় নানা রকমের বন্য প্রাণী। যার ফলে কেবল অরণ্যের স্বাদ উপভোগ করতেই নয়, ওয়াইল্ড লাইফ সাফারির (Wildlife Safari) জন্যও ভ্রমণ প্রেমীদের এক নম্বর পছন্দের জায়গা আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। যদি আপনিও চান এই দ্বীপপুঞ্জে ওয়াইল্ড লাইফ সাফারি করতে তাহলে আপনাকে অবশ্যই যেতে হবে হ্যাভলক (Havelock Island), প্রিস্টিন বিচ রিসোর্ট (Pristine Beach Resort), দিগলিপুরে (Diglipur)।
২. উত্তর পশ্চিম ঘাট । North Western Ghats :
প্রায় ৩০ হাজার কিলোমিটার যায়গা জুড়ে বেশিরভাগই মহারাষ্ট্র (Maharashtra) এবং কর্ণাটকে (Karnataka) অবস্থিত এই রেইনফরেস্ট। এই অরণ্য দক্ষিণ-পশ্চিম মহারাষ্ট্র থেকে শুরু হয়ে এবং দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক এবং কেরালা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। মূলত আর্দ্র পর্ণমোচী বন এই রেইনফরেস্ট। এখানে ১১০০টিরও বেশি প্রজাতির প্রাণী দেখা যায়। যদিও নগরায়নের কারণে পরিসংখ্যান অনুসারে, মূল বনভূমির দুই-তৃতীয়াংশ সাফ বা বন উজাড় করা হয়েছে। এখানে ওয়াইল্ড লাইফ সাফারির জন্য থাকতে পারেন বান্দিপুর সাফারি লজ (Bandipur Safari Lodge), বাইসন রিভার রিসোর্টে (Bison River Resort)।
৩. ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা । Brahmaputra Valley :
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা হলো আধা-চিরসবুজ বন ইকোরিজিয়ন (Ecoregion) যেখানে বিশ্বের সব থেকে বেশি সংখ্যার একশিং গন্ডারের (One-Horned Rhinos) বাসস্থান রয়েছে। এই অরণ্য আসামে ভারতীয় রাজ্য সরকারের কাজিরাঙ্গা ন্যাশনাল পার্ক (Kaziranga National Park) সুরক্ষিত করা রয়েছে। গন্ডার ছাড়াও এখানে রয়েছে বিপুল পরিমানে বন্য হাতি।
এই রেইনফরেস্টে বিশ্বের সব থেকে বেশি সংখ্যার একশিং গন্ডার রয়েছে
এই রেইনফরেস্টে বিশ্বের সব থেকে বেশি সংখ্যার একশিং গন্ডার রয়েছে
উত্তর-পূর্বের এই রেইনফরেস্ট হলো এক প্রাকৃতিক উপহার। যা এখনও পর্যন্ত বাণিজ্যিকীকরণের দাগ দ্বারা অস্পৃশ্য। ফলে এখানে পর্যটকদের খুব বেশি ভিড় হয়না। আসামের এই রেইনফরেস্ট মূলত উত্তর আসামে (North Assam) বিস্তৃত। তবে এর কিছুটা অংশ নাগাল্যান্ড (Nagaland), মিজোরাম (Mizoram) ও ত্রিপুরাতেও (Tripura) রয়েছে। সবুজ ছাড়াও, এই উপত্যকাটি অপূর্ব উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে ওয়াইল্ড লাইফ সাফারি উপভোগ করতে হলে যেতে পারেন ওয়াইল্ড গ্রাস লজ (Wild Grass Lodge), রিসং গেস্ট হাউসে (Rising Guest House)।
৪. দক্ষিণ পশ্চিম ঘাট । South Western Ghats :
এই রেইনফরেস্ট মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকের উত্তর পশ্চিম ঘাট হিসাবে পরিচিত হলেও, এটি কেরালা (Kerala) এবং তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) দক্ষিণ পশ্চিম ঘাট যা আর্দ্র পর্ণমোচী বন নিয়ে গঠিত। এই রেইনফোরেস্টের সমগ্র অঞ্চলটি সবুজ পাতায় আচ্ছাদিত এবং দুটি বিভাগে বিভক্ত। এই অরণ্য বাঘ এবং হাতির মতো বড় বন্য প্রাণীদের আবাস্থল। এই পর্ণমোচী বনের বিশেষত্ব হল নীলকুরুঞ্জি ফুল (Neelkurunji Flower) যা প্রতি ১২ বছর পর পর ফোটে এবং অরণ্যের চারপাশে থাকা পাহাড়গুলিকে নীল রঙে ঢেকে দেয়।
ভারতের প্রায় সকল অংশেই রয়েছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ বন। এই অরণ্যগুলির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বদলায় ঋতুর সঙ্গে সঙ্গে। এক এক ঋতুতে এক এক রকমের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে রেইনফরেস্টগুলিতে। যেমন শুষ্ক মরশুম সাধারণত যারা হাইকিং (Hiking) করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ভালো। পাশাপাশি এই মরশুমে দেখা যায় ভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী। অন্যদিকে, আর্দ্র ঋতুতে রেইনফরেস্টগুলিতে দেখা মেলে বিরল পাখি এবং প্রাণী প্রজাতির। এছাড়াও এই সময়ে গোটা অরণ্য কাঁদামালিপ্ত হয়ে থাকলেও চারপাশ হয়ে ওঠে সবুজ।
0 Comments