Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

কার্স্ট ভূমিরূপ( Karst landforms)

 



কার্স্ট ভূমিরূপ( Karst landforms)


ভুমিকাঃ- কার্স্ট শব্দটি জার্মান যা একটি ইন্দো  ইউরোপীয় শব্দ "kar" থেকে এসেছে যার অর্থ হল শিলা।  ইতালিতে “carso” ও স্লোভেনিয়ায় “ kars” নামে পরিচিত ।স্লোভেনিয়ায় “ kars” শব্দের অর্থ হল উন্মুক্ত প্রস্তরময় ভূমি ( open rocky ground)

সংজ্ঞাঃ  কোন অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠীয় শিলা জলে দ্রবীভূত হয়ে শিলার ভৌত রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন ঘটিয়ে ভূমিরূপ জলনির্গম প্রণালী গঠিত হয় তাকে কার্স্ট ভূমিরূপ বলে।

ভারতের কিছু কার্স্ট অঞ্চলের উদাহরন হল উত্তরাখণ্ডের   দেরাদুন, ছত্তিসগড়ের পাঁচমারি, ওডিশার করাপুট, মেঘালয়য়ের চেরা মালভূমি, অন্দ্রপ্রদেশের বোরাকেভ, কেড প্রভৃতি।

 

 কার্স্ট ভূমিরূপ গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় শর্তসমুহ হলঃ

1.     দ্রবণীয় শিলাস্তরের উপস্থিতিঃ  ভূপৃষ্ঠের উপরে বা নিচে দ্রবণীয় শিলাস্তর থাকা জরুরি।

2.     শিলাস্তরঃ ভূপৃষ্ঠের কাছে চুনাপাথর ও ডলোমাইট জাতীয় শিলাস্তর থাকা প্রয়োজন। 

3.     বিশুদ্ধ চুনাপাথর গঠিত ভুমিরুপঃ  বিশুদ্ধ চুনাপাথরের ক্যালশিয়াম কার্বনেটের পরিমাণ ৪০% বেশী থাকতে হবে ফলে শিলাস্তর দারণযুক্ত হবে ফলে অতি সহজে জল প্রবেশ করতে পারবে।

4.     পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতঃ  বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩০ সেমির বেশী হতে হবে।

5.     সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে অবস্থানঃ  দ্রাব্য শিলাস্তরটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উঁচুতে অবস্থিত হতে হবে।

6.      নদীর উপস্থিতিঃ  দ্রাব্য অদ্রাব্য শিলা পরস্পর অবস্থিত হওয়ার জন্যে নদী অদ্রাব্য শিলা কেটে দ্রাব্য শিলাকে উন্মুক্ত করে দেয়।তাই নদীর উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন।

7.     অঞ্চল টি আয়তনে বড় হওয়া প্রয়োজন ।


কার্স্টের ক্ষয়  প্রক্রিয়াঃ

চুনাপাথর ও ডলোমাইট জাতীয় শিলাস্তর হলে কার্স্টের ক্ষয় প্রক্রিয়া মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে

·        দ্রবন প্রক্রিয়াঃ বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাই অক্সাইড ( CO2) এর সাথে বৃষ্টির জল মিশে কার্বলিক অ্যাসিড ( H2CO3)  তৈরি হয় । গাছের ডালপালা পচে হিউমিক অ্যাসিড ( C40H24 O12)  তৈরি হয় । কার্বলিক অ্যাসিড ও হিউমিক অ্যাসিড চুনাপাথরের সাথে মিশে অসংখ্য দ্রবনজনিত ভূমিরূপ গঠিত হয়

·        অবঘর্ষ প্রক্রিয়াঃ দ্রবীভূত জলের সাথে নুড়ি , বালি প্রভৃতির ঘর্ষণে  চুনাপাথর ক্ষয় হয়।

 

 

কার্স্ট ভূমিরূপঃ

চুনাপাথর ও ডলোমাইট জলে দ্রবীভূত হয়ে যে ভূমিরূপগুলি  গঠন করে সেগুলি হলঃ

ক। পৃষ্ঠীয় ভূমিরূপঃ

১. টেরা রোসাঃ টেরা শব্দের অর্থ মাটি এবং রোসা শব্দের অর্থ হল লাল।এটি একধরনের লাল মাটি যা অবিশুদ্ধ চুনাপাথর দ্বারা গঠিত। কম ঢালযুক্ত অঞ্চলে ক্রমাগত দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে চুনাপাথর নিচের দিকে অপসারিত হয়। তখন লৌহ জাতীয় পদার্থ জমাট বেঁধে যে লাল রঙের মাটি তৈরি করে তাকে টেরা রোসা বলে। আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে এই ধরনের মাটি দেখা যায়।এই মাটি অনুর্বর বলে কার্স্ট অঞ্চলে চাষাবাদ হয় না।



২। গ্রাইক ও ক্লিন্টঃ দ্রবন কার্যের ফলে চুনাপাথর অঞ্চলে ফাটল ও দারণের সৃষ্টি হয়ে ক্ষয়গুলি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সংকীর্ন খাত তৈরি হলে একে বলে গ্রাইক এবং গ্রাইকের মধ্যবর্তী সমতল উচ্চভুমিকে ক্লিন্ট বলে। ভারতের দ্রুগ জেলায় ২ কিমি উওরে নন্দিনী খনি অঞ্চলে গ্রাইক ও ক্লিন্ট সৃষ্টি হয়েছে।



৩। ল্যাপিস বা কারেনঃ অধিক ঢাল যুক্ত চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবণ  কার্যের ফলে অসংখ্য অগভীর ও রৈখিক খাতের সৃষ্টি হয় এবং সমান্তরালে বিন্যস্ত খাতগুলি তীক্ষ্ণ শীর্ষদেশ দ্বারা পৃথক হয়ে অবস্থান করে তাকে ল্যাপিস বলে আর জার্মান ভাষাতে কারেন বলে।



খ। অবনমিত ভূমিরূপঃ

১। সিঙ্ক হোলঃ চুনাপাথর অঞ্চলে দ্রবণ ক্ষয়ের ফলে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। যা ২ মিটার থেকে ১০ মিটার গভীর হয়। এর আকৃতি ফানেলের মতো হয় কারণ দ্রবণ ক্ষয় উপরের দিকে বেশী এবং নিচের  দিকে কম হয়।



২। সোয়ালো হোলঃ যদি সিঙ্ক হোলের উপর মাটির আবরন না থাকার ফলে ফাটল বরাবর জল ভুগর্ভে প্রবেশ করে তাকে সোয়ালো হোল বলে। এর মুখ থেকে অভ্যান্তর পর্যন্ত সুড়ঙ্গকে পোনর বলে।



৩।  ডোলাইনঃ দ্রবন কার্যের ফলে সিঙ্ক হোলগুলি ক্রমশ বড় হতে থাকে যার গভীরতা ১০০ মিটার এবং আয়তন ১০০০বর্গমিটার হয় এইধরনের সিঙ্ক হোল কে পুর্বতন যুগস্লোভীয়াতে ডোলাইন বলে।



৪। দ্রবণ প্যানঃ ডোলাইন যখন অতি- প্রশস্ত ও অগভীর হয় তাকে দ্রবণ প্যান বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ও ইন্ডিয়ানা প্রদেশের উচ্চ লাস্ট নদী অঞ্চলে দেখা  যায়।

৫। কার্স্ট হ্রদঃ ডোলাইনের তলদেশে অনেক সময় জলধৌত কাদা সঞ্চিত হয়ে জলের নিম্নে গমন বন্ধ হয়ে যায় এবং কার্স্ট হ্রদ তৈরি করে। 

৬।উভালা ও পোলজেঃ একাধিক সিঙ্ক হোল ও ডোলাইন পরস্পর মিলিত হয়ে যখন বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি করে তাকে উভালা বলে। কার্স্ট অঞ্চলে সমতল তলদেশে , চারদিকে  খাড়া ঢালযুক্ত ও সুবৃহৎ গর্তকে পোলজে বলে।



উপরোক্ত ভূমিরূপগুলি ছাড়াও কিছু কার্স্ট ভূমিরূপ হল কার্স্ট জানালা, হামস এবং কার্স্ট সমভূমি ।

গ। নদী দ্বারা সৃষ্ট কার্স্ট ভূমিরূপঃ

১। গিরিখাতঃ কার্স্ট অঞ্চলে দিয়ে যখন নদী প্রবাহিত হয় তখন চুনপাথর নদীর সাথে জলের সাথে মিশ্রিত হয়ে দ্রবণ প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে উপত্যকা সৃষ্টি করে তাকে গিরিখাত বলে। ভারতের গোদাবরী নদীতে দেখা যায়।

২। অন্ধ উপত্যকা ও শুষ্ক উপত্যকাঃ  কার্স্ট অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত নদী যখন সিঙ্ক হোলে প্রবেশ করে তখন উপত্যকার বিস্তার উৎস থেকে সিঙ্ক হোল পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ওইখানে  উপত্যকার শেষ হয়ে যায় তাকে অন্ধ উপত্যকা বলে। নদী উপত্যকা শূন্য হয়ে পড়লে তাকে শুষ্ক উপত্যকা বলে।

৩। স্বাভাবিক সুড়ঙ্গ ও স্বাভাবিক  সেতুঃ কার্স্ট অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের শেষ অবস্থায় ধসের জন্য যেমন উভালা সৃষ্টি হয় তেমন ভুগর্ভস্থ নদীগুলি প্রস্রবণের আকারে ভূপৃষ্ঠের দেখা যায়। তাকে রাইস বলে। ধসের পর সুড়ঙ্গের অবশিষ্ট অংশকে স্বাভাবিক সুড়ঙ্গ বলে। মদ্যপ্রদেশের মারাদেও পর্বতে স্বাভাবিক সুড়ঙ্গ বলে। স্বাভাবিক সুড়ঙ্গের ছাদ দ্রবীভূত হয়ে ক্ষয় পেতে পেতে ধসে যায় এবং টা সরু হয়ে সেতু আকৃতি ধারন করে। একে স্বাভাবিক সেতু বলে।

ঘ। ভুগর্ভে গঠিত কার্স্ট ভূমিরূপঃ

১। গুহা ও ভু গহ্বরঃ চুনাপাথরের ফাটলের মধ্য দিয়ে জল যখন নীচের দিকে প্রবাহিত হয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি করে। এই গর্তগুলি দীর্ঘদিন ক্ষয় করে আরও প্রসারিত হয়ে গুহার সৃষ্টি করে ।এই গুহার আকার যখন অনেক বড় হয় তাকে ভু- গহ্বর বলে। ভারতে মধ্যপ্রদেশের  পাঞ্চমারি, অন্ধ প্রদেশের বোরাগুহা , উওরাখন্ডের দেরাদুন, মেঘালয়য়ের চেরাপুঞ্জিতে এই গুহার সৃষ্টি হয়েছে।

২। স্টালাকটাইটঃ দ্রবীভূত চুনাপাথর মিশ্রিত জল গুহার  ছাদ থেকে জল চুইয়ে  মেঝেতে পড়তে শুরু করে এবং বাষ্পীভবনের ফলে ক্যালশিয়াম কার্বনেট সঞ্চিত হয়ে ঝুরির আকারে ঝুলতে থাকে তাকে স্টালাকটাইট বলে।

৩।স্টালাগমাইটঃ গুহার ছাদ থেকে জলের ফোঁটা একটু একটু  করে মেঝেতে জমে মোটা স্তম্ভের আকার নেয় তাকে স্টালাগমাইট বলে। বিহারের সাসারামের কাছে গুপ্তেরশবর গহ্বরে এই ধরনের ভুমিরুপ দেখা যায়।



৪। স্তম্ভঃ যদি গুহার ছাদ থেকে নামতে থাকা স্টালাগটা ইট ও নিচের থেকে উপরে উঠতে থাকা স্টালাগমাইট   যখন একসাথে যুক্ত হয়ে দণ্ডের আকার ধারন করে তাকে বলে স্তম্ভ 

৫। হেলিকটাইটঃ চুনাপাথরের গুহার মধ্যে দ্রবীভূত চুন উপর থেকে নিচের দিকে, নিচে থেকে উপর দিকে, তির্যক ভাবে বৃদ্ধি পায় তাকে বলে হেলিকটাইট ।

সায়ন্তনী সিং 

জিওগ্রাফিয়া


 

Reactions

Post a Comment

1 Comments

  1. Thanks for your good and useful information. Zigya is a very good website for standard (class) CBSE, ICSE and all State Boards textbook solutions for all subjects Class 8 to 12. https://www.zigya.com/

    ReplyDelete

Ad Code