নদী পুনযৌবনলাভের ফলে সৃষ্ট দুটি ভূমিরূপ চিত্র সহ আলোচনা কর।
নদীর পুনর্যৌবনলাভ ক্ষয়চক্রকে দীর্ঘায়িত করে।ভূ-অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কারণে এবং জলবায়ু পরিবর্তন হলে ক্ষয়চক্রে বিভিন্ন বাধা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। একটি ক্ষয়চক্রের পূর্ণতা প্রাপ্তির পূর্বেই আরেকটি নতুন ক্ষয়চক্র সৃষ্টি হতে পারে অর্থাৎ একটি ক্ষয়চক্র চলাকালীন আরেকটির ক্ষয়চক্রের সূচনা হয়। এরূপ অবস্থাকে ক্ষয়চক্রের বা ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভ বলে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় – বার্ধক্য পর্যায়ে নদী সাধারণত মৃদু ঢালযুক্ত অঞ্চলের উপর দিয়ে ধীর গতিতে বয়ে যায়, এই অবস্থায় নদীর পুনর্যৌবনলাভ ঘটলে ক্ষয়চক্র বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং নদী নিম্ন ক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে আবার যৌবনবস্থায় ফিরে আসে।
নিক বিন্দু
সংজ্ঞাঃ ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর উচ্চ উপত্যকার পুরাতন মৃদু ভাল ও নিম্ন উপত্যকার নতুন মৃদু ঢালের সংযোগ বিন্দুতে যে খাঁজের সৃষ্টি হয়, তাকে নিক বিন্দু বা নিক পয়েন্ট বলে।
সৃষ্টির কারনঃ
নদীর গতিপথের অংশবিশেষে প্রবল ভূ আলোড়নেরর কারণে ভূমিভাগের উত্থান অথবা অবনমনের ফলে নদীর গতিপথের ঢালের পরিবর্তন ঘটে নিক বিন্দু সৃষ্টি হয়। নিক বিন্দুতে নতুন ঢাল পুরাতন ভাল অপেক্ষা উঁচু হয়। নিক পয়েন্টের উপরের অংশের মৃদু ঢালের সঙ্গে নিচের খাড়া ঢালের মধ্যে ভূ-প্রকৃতিগত পার্থক্যের জন্য নিক পয়েন্টে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়।
উদাহরনঃ
মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে নর্মদা নদীর উপর অবস্থিত ধুঁয়াধার জলপ্রপাতটি এইরকম নিক বিন্দুর ওপর সৃষ্টি হয়েছে।
উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা
সংজ্ঞাঃ
ভূ-আন্দোলনের ফলে নদী নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা ফিরে পেলে নদীর পুনর্যৌবনলাভ ঘটে । একেই উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বলে।
সৃষ্টির কারণ
অনেক সময় নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে পূর্বতন উপত্যকার মধ্যে কেটে বসে গিয়ে পুরনো উপত্যকার মধ্যে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট একটি নবীন উপত্যকার সৃষ্টি করে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটি উপত্যকার মধ্যে আরেক টি উপত্যকা অবস্থান করছে।
নদীমঞ্চ
সংজ্ঞাঃ সমুদ্রপৃষ্ঠের ধনাত্মক পরিবর্তন বা জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে নদীতে জল প্রবাহের মাত্রা বেড়ে গেলে নদীর পুনর্যৌবন লাভ করে এবং ওই পুনর্যৌবন প্রাপ্ত নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে পুরাতন উপত্যকায় উল্লম্বভাবে কেটে বসে যায়। এর ফলে নদীর উভয় পার্শ্বে পুরানো, পরিতক্ত ও মৃদু ঢাল বিশিষ্ট উপত্যাকাটি নবীন উপত্যকার কিছুটা উপরে মঞ্চের আকারে অবস্থান করে। একে নদী মঞ্চ বলে। ইহা সিঁড়ি বা ধাপের মতো দেখতে হয়। নদী মঞ্চে পলল আবৃত থাকলে তাকে পলল নদী মঞ্চ এবং ভিত্তি শিলা উন্মুক্ত থাকলে তাকে প্রস্তরময় নদী মঞ্চ বলা হয়।
0 Comments