Status of Tourism at Mandarmani
' ব্যস্ত ' মানে কক্ষনো নয় " বিশেষ রূপে অস্ত ",
/ ' ভ্রমণ ' শব্দও নয়তো " ভ্রমের উপর ন্যস্ত " ।
বাংলার বেলাভূমির মধ্যে অন্যতম আশ্চর্য হল মন্দারমণি । এটি ভারতের এমন একটি প্রসিদ্ধ স্থান যার পুরোটাই মোটর করে ঘুরে বেড়ানো যায় । দৈর্ঘ্যে এই বেলাভূমি প্রায় ১২ কিমি । শান্ত , স্নিগ্ধ , নির্জন এখানে যে কেউ আসতে পারে । তবে জোয়ার উত্তাল তটরেখায় পৌঁছালে বেলা ভূমিতে নামা সম্ভবপর হয় না । পশ্চিমে ছোট্ট মন্দারমোহন নদী যার কারণেই এই বেলাভূমির নাম মন্দারমণি । একে শংকরপুর থেকে আলাদা করে রেখেছে । সমুদ্র মানেই সাধারন পর্যটক একটা বিশেষ জিনিসকে খুঁজে বেড়ায় ; ঠিক তাই লাল কাঁকড়া । এদের দলবদ্ধভাবে যাওয়া যেন মন্দার ফুলের মতো দেখায় তাই অন্যভাবে বলা যায় , এই কারণে এই বেলাভূমির নাম মন্দারমণি ।এতটাই গতিময়তায় ও বৈচিত্র্যে ভরা এই মন্দারমণি সাগর সৈকত । যে ছোট্ট খাটো Trip বা একলা অবসরকে কাজে লাগানোর জন্য মন্দারমণির নাম সর্বাগ্রে গৃহীত ।
ভৌগোলিক দিক থেকে এই জায়গাটি পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে পূর্ব মেদনীপুর জেলায় অবস্থিত ।কলকাতা থেকে যাওয়ার অপেক্ষা শুধু ১৫০ - ১৮০ কিমি । অটো , ট্রেকার , প্রাইভেট কার সব কিছু চাউল খোলা থেকে সবসময় পাওয়ার সুবিধা রয়েছে । বাংলার মধ্যে এটিই একটি বেলাভূমি যেখানে নির্দ্বিধায় প্রাইভেট কার , ট্রেকার , বাইক ইত্যাদি চলানো যায় । তবে বেলাভূমির বালিগুলি গ্রাথনিকভাবে মিহি হওয়ায় গাড়ির চাকা ঢুকে যাওয়ার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় পর্যটকদের । মন্দারমণিতে অবস্থিত হোটেলে বুকিং থাকলে হোটেলের নিজস্ব গাড়ি চাউল খোলা থেকে মন্দারমণি নিয়ে আসে । চাউল খোলা থেকে মন্দারমণির গ্রাম্য পথ হল ৮ কিমি যা অপূর্ব শোভা মন্ডিত । এই বেলাভূমির নিকট বর্তী একটি গ্রাম হল দাদনপাত্র বাড় গ্রাম । বহু মানুষ এখানে জেলে হিসেবে জীবিকায় নিযুক্ত ।
হোটেলের মেলা এখানে সারি সারি রয়েছে । CRZ1 ও 2 এর মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে । এগুলির সবকটি বেআইনি ভাবে । সরকারি হোটেল একেবারেই নেই । মানুষ নিজেদের বিনোদনের জন্য বেলাভূমির পরিবেশকে তার মায়াময় , ছায়াময় পরিবেশকে বিনষ্ট করেছে । নিজেদেরকে পরিবেশের দান বলে স্বীকারক্তি দিয়েও পরিবেশের বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে তৎপর হয়ে উঠেছে । এর প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরিবেশের এই বিরুদ্ধাচারণের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে । তবে বেলা ভূমির চারধারে যেন প্রকৃতির দেওয়ালের মধ্যে বিস্তৃত রয়েছে সারি সারি কেয়া বেত কাজু বাদামের গাছ । প্রকৃতি যেন এখানে সমুদ্রের মৃদু প্রাণভরা বাতাসে খেলা করছে । জ্যোৎস্না রাতের শোভা যেন মন্দারমণির সৌন্দর্যকে আরও বেশি করে সাজিয়ে তুলেছে । নিজেদের একাকিত্বকে , মলিনতাকে মন্দারমণির এই জ্যোৎস্না রাতের ছোঁয়ায় স্লান করে দেওয়া যায় ।যারা উপলব্ধি করতে পারে তারা প্রকৃতভাবে মন্দারমণির নৈস্বর্গীক সৌন্দর্যকে অন্তরের দৃষ্টি তথা অনুভূতি দিয়ে বুঝতে সক্ষম হয় । সমুদ্রের ঢেউয়ের আসা যাওয়া যেন জীবনের সুখ - দুঃখের আনাগোনার প্রতীক মাত্র ।
তটরেখার পাশে সমুদ্র তীরের ক্ষয় আটকানোর জন্য রাখা অজস্র বোল্ডারের জন্য বর্ষার সময়কার ঢেউ - এর জলে জমা হয় । পরিশেষে একটাই বার্তা নির্মাণ বন্ধ নয় , পরিবেশের সাথে সাজ্জুস্য রেখে হোটেল নির্মাণ করা উচিত । তাই প্রকৃতির বেলাভূমির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করার একমাত্র ঠিকানা হল মন্দারমণি । মন্দারমণির মধ্যে মণির মতো ঔজ্জ্বল্য , স্নিগ্ধতা , নির্জনতায় নিজেকে বিলীন করে দিতে পর্যটকদের " চল মন্দারমণি যাওয়া যাক " এই নির্বাচনটি সঠিক ।
তাই তো জীবনানন্দের ভাষায় বলা যায় :----
" আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে
এই বাংলায় , /
হয়তো মানুষ নয় - হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে ।"
প্রসাদ সাঁতরা
জিওগ্রাফিয়া
0 Comments