জনসংখ্যার বিবর্তন তত্ত্বঃ
ভূমিকাঃ কোন দেশের জন্মহার , মৃত্যুহার ও পরিব্রাজন হার সেই
দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনশীল। ১৯২৯
সালে ওয়ারেন থম্পসন ( Warren
Thompson) সর্বপ্রথম
জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও হ্রাসের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রভাবিত হওয়ার কথা বলেন। পরবর্তী
কালে ১৯৪৫ সালে E.W.NOTESTEIN এর সুস্পষ্ট ধারণা দেন। ১৯৬৬
সালে BEAUJEU – GARNIER জনবিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।
সংজ্ঞাঃ জনবিবর্তন
তত্ত্ব সম্পর্কে “ dictionary of human
geography” থেকে যে ধারণা পাওয়া যায় টা হলঃ “ A general
model describing the evolution of fertility and mortality over time . It has
been devised with particular reference to the experience of developed
countries”
সুতরাং , কোন এক নিদিষ্ট দেশে সময়ের সাথে সাথে জন্মহার ,
মৃত্যুহার ও পরিব্রাজন হার সেই দেশের আর্থ- সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে
তাকে জনবিবর্তন তত্ত্ব বলে।
মূল তত্ত্বঃ কোন দেশের সমাজ ও অর্থনীতি সেই দেশের জন্মহার ও
মৃত্যুহারের সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। এর মাধ্যমে মানব উন্নয়নের মাত্রা নির্ধারিত
করা হয়ে থাকে। জন্মহার ও মৃত্যু হারের সম্পর্ক কে নিচে আলোচনা করা হলঃ
১। উচ্চজন্মহার ও উচ্চ মৃত্যুহারঃ = জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
কম = কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি = দুর্বল অর্থনীতি ও সমাজ
২।। উচ্চ জন্মহার ও নিম্নমুখী মৃত্যুহারঃ = দ্রুত জনসংখ্যা
বৃদ্ধি = শিল্পোন্নয়ন শুরু = উন্নয়নের প্রথম পর্যায়
৩। নিম্নমুখী জন্মহার ও নিম্নমুখী মৃত্যুহারঃ = জনসংখ্যা
বৃদ্ধির হার কম = উন্নত অর্থনীতি = আধুনিক কৃষি , শিল্প ও বানিজ্য ভিত্তিক
অর্থনীতি = উন্নত সমাজ
৪। নিম্ন জন্মহার ও অতি নিম্নমৃত্যুহারঃ = জনসংখ্যার
বৃদ্ধির হার কম এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম = অতিউন্নত অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার সম্ভবনা
। এটি একটি সাময়িক ঘটনা।
১৯৬৬ সালে BEAUJEU
– GARNIER জনবিবর্তনের
তিনটি পর্যায়ের কথা বলেনঃ ১। ক্রম বর্ধমান প্রাচীন প্রকৃতির হার
২। ক্রমবিবর্তিত হার
৩।পরিনত হার
জনসংখ্যার বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়গুলি আলোচনা করা হলঃ
১। প্রাক – শিল্প পর্যায়ঃ
·
মূলত
শিল্প বিপ্লবের আগের সময়কে বোঝানো হয়েছে যেখানে উচ্চজন্মহার ও উচ্চমৃত্যুহার,
কৃষিভিত্তিক সমাজ ,দুর্বল আর্থ- সামাজিক
পরিকাঠামো, দুর্বল অর্থনীতি প্রভৃতি দেখা যায়।
·
এই
পর্যায়ে অধিক মৃত্যুহারের কারণ চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনুন্নতি , মহামারি , দুর্ভিক্ষ
, অপুষ্টি , প্রাকৃতির দুর্যোগ ও
যুদ্ধবিগ্রহ প্রভৃতি।
·
উদাহরণঃ
পৃথিবীতে কোন জায়গাতে প্রাক – শিল্প পর্যায়
নেই তবে আফ্রিকাতে জাম্বিয়া, গ্যাবন , সোয়াজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।
২। নবীন পাশ্চাত্য পর্যায়ঃ
·
শিল্প
বিপ্লবের সময়কে বোঝানো হয়েছে। উচ্চ
জন্মহার ও নিম্নমুখী মৃত্যুহার এই পর্যায়ে লক্ষ করা যায়।
·
আধুনিক
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে মৃত্যুহার অনেকটাই কমেছে।জন্মহার বেশী হওয়ার জন্য
জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায়।
·
শিল্পান্নতি
শুরু , আর্থ সামাজিক পরিকাঠামোরউন্নতির ফলে দুর্বল অর্থনীতি সবল হওয়ার পথে।
·
জন্মহার
নিয়ন্তিত করতে না পারলে জনবিস্ফরন ঘটতে পারে।
·
উদাহরণঃ
চিন, বাংলাদেশ ব্রাজিল রোমানিয়া প্রভৃতি দেশ।
৩। আধুনিক পাশ্চাত্য পর্যায়ঃ
·
শিল্পের
প্রসার ও নগরায়ন হয় যার ফলে জীবনযাত্রার মানের উন্নতি হয় এছাড়া নিম্নমুখী জন্ম ও
মৃত্যুহার যদিও জন্মহার অপেক্ষাকৃত বেশী
ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম।
·
চিকিৎসা
বিজ্ঞানের উন্নতিতে মৃত্যুহার কমেছে।
·
উন্নত
অর্থনৈতিক পরিকাঠামো জীবনযাত্রার মানকে উন্নতি করে।
·
শহর
ও নগরের উদ্ভব ঘটে ।
·
উদাহরণঃ
ভারত মূলত তৃতীয় পর্যায়ের অন্তর্গত।
৪। পরিণত পর্যায়ঃ
·
জন্মহার
ও মৃত্যুহার নিয়ন্তিত।
·
শিল্পের
উন্নতির ফলে দেশের সব ক্ষেত্রের উন্নতি ঘটেছে।
·
জীবন
যাত্রার মান উন্নত।
·
উন্নত
অর্থনীতি
·
উদাহরণঃ
আমেরিকা , জাপান, ফ্রাস যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি
৫। পঞ্চম পর্যায়ঃ
কিছু কিছু ভৌগোলিক
এই পঞ্চম পর্যায়ের কথা বলেছেন যা সাধারণত অতি উন্নত দেশের জন্যে প্রযোজ্য। যেখানে
জন্মহার ও মৃত্যুহার নিয়ন্তিত ,মৃত্যুহার জন্মহার অপেক্ষা বেশী এই জন্য ঋণাত্মক
জনসংখ্যা বৃদ্ধি বলা হয়, যদিও এটি সাময়িক
সময়ের জন্যে । সেইসব দেশে অতি উন্নত অর্থনীতি, উচ্চ জীবনযাত্রার মান হওয়ার জন্যে জন্মহার কম হয় ।এই
ঋণাত্মক বৃদ্ধির জন্যে অনেক সময় অর্থনীতি ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
এই পর্যায়ের অন্তরগর্ত দেশ হল নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি।
উপসংহারঃ সব পর্যায়গুলি সব দেশে সমান ভাবে প্রযোজ্য নয়
।আমেরিকার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় দেখা যায়নি।জন্মহার ও মৃত্যুহার সবক্ষেত্রে সমান হারে নাও কমতে পারে। তবুও
জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
you can go through this link
https://geographia97.blogspot.com/2020/10/orissa-national-park-and-wildlife-sanchuary.html
0 Comments