Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

ভারতের জলবায়ু অঞ্চল//GEOGRAPHIA//WBSLST// PART 1//climate of india

 

ভারতের জলবায়ু অঞ্চল//GEOGRAPHIA//WBSLST// PART 1//climate of india

 


আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য

আবহাওয়া

কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের দৈনন্দিন অবস্থাই আবহাওয়া।

আবহাওয়া হলো বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের দৈনন্দিন অবস্থা।

স্থানভেদে আবহাওয়া সহজেই পরিবর্তিত হয়।

কোনো স্থানের আবহাওয়া প্রতিদিন, এমনকি প্রতি ঘণ্টায় পরিবর্তিত হয়।

আবহাওয়া কোনো জায়গার স্বল্প সময়ের অবস্থাকে প্রকাশ করে।

জলবায়ু

জলবায়ু হলো কোনো বিস্তৃত অঞ্চলের কমপক্ষে ৩০-৫০ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থা।

জলবায়ু হলো বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের দীর্ঘকালীন সামগ্রিক অবস্থা।

জলবায়ুর পরিবর্তন হয় স্থানভেদে ও ঋতুভেদে।

প্রতিদিনের ব্যবধানে কোনো অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তিত হয় না।

জলবায়ু হলো বিভিন্ন আবহাওয়ার সমন্বয়।

ভারতের বহু বিচিত্র ভূগোল ভূতত্ত্ব অনেকাংশেই ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে থাকে উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা উত্তর-পশ্চিমে থর মরুভূমির অবস্থানের ব্যাপারে একথা বিশেষভাবে প্রতীয়মান হয় হিমালয় মধ্য এশিয়া থেকে প্রবাহিত অতিশীতল ক্যাটাবেটিক বায়ুপ্রবাহকে রোধ করে ফলে শীতকালেও উত্তর ভারত উষ্ণ বা সামান্য শীতল থাকে এই একই কারণে ভারতে গ্রীষ্ম অত্যধিক উষ্ণ হয় কর্কটক্রান্তি রেখা এই দেশের মাঝবরাবর প্রসারিত হয়ে সারা দেশটিকে ক্রান্তীয় নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে স্থাপন করলেও, ভারতের জলবায়ু সাধারণত ক্রান্তীয়

ভারতের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রক সমূহ

 

অবস্থান এবং অক্ষাংশের বিস্তার

ভারতের অক্ষাংশ প্রায় 8°N থেকে 37°N পর্যন্ত বিস্তৃত এবং কর্কটক্রান্তি রেখা(২৩.৫)  ভারত কে সমান দুইভাগে ভাগ করেছে ফলে কর্কট ক্রান্তীয় রেখার দক্ষিণের অঞ্চলগুলি, বিষুব রেখার কাছাকাছি হওয়ায়, সারা বছর ধরে উচ্চ তাপমাত্রা অনুভব করে এবং ক্রান্তীয় জলবায়ু দেখা যায় , যখন উত্তর অংশে অবস্থিত অঞ্চলগুলি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু দেখা যায় , আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর নিয়ে গঠিত জলাশয় উপদ্বীপীয় ভারতকে ঘিরে রয়েছে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু লক্ষ্য করা যায়।

সমুদ্র থেকে দূরত্ব

দীর্ঘ উপকূলরেখা সহ, বৃহৎ উপকূলীয় অঞ্চলে সমভাবাপন্ন  জলবায়ু রয়েছে। এবং সমুদ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায়  জলবায়ু অবস্থা চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠে।

হিমালয় পর্বতমালা

ভারতের উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ুতে হিমালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এটি উত্তর এশিয়ার ঠান্ডা বাতাসকে ভারতে আসতে বাধা দেয়, এইভাবে শীতের প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।  এটি মৌসুমি বায়ুকেও অবরুদ্ধ করে, যার ফলে উপমহাদেশে আর্দ্রতা কমাতে বাধা দেয়।

উচ্চতা

উচ্চতার সাথে তাপমাত্রা কমে যায়। তাই উচ্চতার সাথে তাপমাত্রার ব্যস্ত সম্পর্ক। সিমলা, দেরাদুর দার্জিলিং প্রভৃতি পাহাড়ি অঞ্চল গুলির তাপমাত্রা অনেক কম, উপদ্বীপ ভারতে অবস্থিত হলেও উচ্চ উচ্চতার স্থানগুলির একটি ঠান্ডা জলবায়ু রয়েছে, যেমন: উটি।

ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়

 গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে উৎপন্ন হয় এবং উপদ্বীপ ভারতের বড় অংশকে প্রভাবিত করে।  বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে উৎপন্ন হয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়ার অবস্থাকে প্রভাবিত করে।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ভূমধ্যসাগর থেকে উৎপন্ন হয় এবং পশ্চিমা জেট স্ট্রিমের প্রভাবে পূর্ব দিকে যাত্রা করে। উত্তর সমভূমি তথা পাঞ্জাব হরিয়ানা  এবং পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলের শীতকালীন বৃষ্টি ঘটায়

ঊর্ধ্ব বায়ু সঞ্চালন

ভারতীয় অঞ্চলের উপরের বায়ু সঞ্চালনের পরিবর্তনগুলি ভারতের জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।

জেট স্ট্রীম নামে পরিচিত বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে অবস্থিত বায়ু স্রোতগুলি বর্ষার আগমন এবং প্রস্থানের  নির্ধারক হিসাবেও পরিচিত।

 

ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল

ভারতের সুবিশাল আয়তনের কারণে ভারতের জলবায়ু বৈচিত্র্যময়। ভারতের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য গুলি হল

১. জলবায়ুর প্রকৃতি:  ভারত ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এবং প্রায় সর্বত্র মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেখা যায় বলে ভারতে জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির।

২. ঋতু পরিবর্তন:  ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, তার ঋতু পরিবর্তন। ভারতে প্রধান ঋতু 4টি। ঋতুগুলি হল যথাক্রমে (i) গ্রীষ্মকাল, (ii) বর্ষাকাল, (iii) শরৎকাল, (iv) শীতকাল।

 

৩. বায়ুর আর্দ্রতা:  মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতের গ্রীষ্মকাল আর্দ্র ও শীতকাল শুষ্ক। এত ঋতু বৈচিত্রতার কারণেই ভারতকে “অন্তহীন ঋতুর দেশ [Country of Endless season] বলা হয়।

৪. ঋতুর স্থায়িত্ব:  ক্রান্তীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতে গ্রীষ্মকালের দৈর্ঘ্য শীতকালের দৈর্ঘ্যের তুলনায় বেশি।

৫. উষ্মতার পরিবর্তন:  গ্রীষ্মকালীন ভারতের তাপমাত্রা 35 ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হয় এবং শীতকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 10 থেকে 15 ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে। তবে উত্তর ভারতের জলবায়ু দক্ষিণ ভারতের তুলনায় অনেক বেশী চরমভাবাপন্ন। উত্তর ভারতে শীত ও গ্রীষ্ম দুটির খুব তীব্র। শীতকালে পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হয়।

৬. বৃষ্টিপাত:  দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষাকালে সর্বাধিক প্রায় 80% বৃষ্টিপাত ঘটে। উত্তর পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টি হয়। ভারতে মোট বৃষ্টিপাতের 84% বর্ষাকালে, 13% শরৎকালে এবং 3% শীতকালে সংঘটিত হয়।

৭. শুষ্কতা:  উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু স্থলভাগ থেকে আসে বলে ভারতে শীতকাল শুষ্ক থাকে।

৮. বায়ুপ্রবাহ:  শীতকালে মৌসুমি বায়ু যে দিক থেকে প্রবাহিত হয় গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ঠিক তার বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়। যেমন - গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ুর দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে এবং শীত কালে উত্তর পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে থাকে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে স্থানীয় কিছু বায়ু প্রবাহ দেখা যায় , যেমন - কালবৈশাখী, লু, আঁধি প্রভৃতি

৯. শীতকালীন বৃষ্টিপাত:  “পশ্চিমি ঝাঞ্ঝা ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভারতে শীতকালে কোথাও কোথাও সামান্য বৃষ্টিপাত ঘটে।

১০. তুষারপাত:  শীতকালে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে অনেক স্থানে তুষারপাত ঘটে।

১১. লু বায়ু :  গ্রীষ্মকালে মধ্য ও পশ্চিম ভারতে উষ্ম লু বায়ু প্রবাহিত হয়।

১২. বৃষ্টিবহুল স্থান : পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত (১,৩৫০ সেমি) মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির নিকট মৌসিনরামে ঘটে।

১৩. খরা ও বন্যার সৃষ্টি:  ভারতের জলবায়ুতে প্রায়ই খরা ও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।

১৪. বৃষ্টিপাতের সময়:  ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত বর্ষাকালের শেষের দিকে ঘটে।

১৫. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল:  ভারতের প্রধান দুটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞল হল (i) পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বাংশ ও (ii) মেঘালয়ের শিলং ও তার নিকটবর্তী অঞ্চল।

 

 

 

Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code