Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলঃ - জনসংখ্যা ও জনবসতি// HS GEOGRAPHY : POPULATION AND SETTLEMENT PART4

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলঃ - জনসংখ্যা ও জনবসতি// HS GEOGRAPHY : POPULATION AND SETTLEMENT PART 4



বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠার কারণ



অরণ্যাবৃত বন্ধুর ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলে, অনুর্বর কৃষিক্ষেত্রে এবং প্রতিকূল জলবায়ু অঞ্চলে জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। প্রাকৃতিক, আর্থসামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গঠিত হয়।

উচ্চমাধ্যমিক ভূগোলঃ - জনসংখ্যা ও জনবসতি// HS GEOGRAPHY : POPULATION AND SETTLEMENT PART4



(1) প্রাকৃতিক কারণ


  • ভূপ্রকৃতি : বন্ধুর বা তরঙ্গায়িত ভূপৃষ্ঠে, পাহাড়ের ঢালে, পাহাড়ের অভিক্ষিপ্তাংশে (Spur) ও শীর্ষদেশে যেখানে ভূমি চাষবাসের অনুপযুক্ত, যাতায়াত ব্যবস্থা অনুন্নত এবং শিল্পস্থাপনের অনুপযুক্ত, সেখানে জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। কুর্ক উপজাতিদের বসতি এই ধরনের বসতি।


  • জলবায়ু : প্রতিকূল জলবায়ু অঞ্চলে, বিশেষত রুক্ষ জলবায়ু অঞ্চলের জমি চাষের অনুপযুক্ত। তাই, এই অঞ্চলে ভূমির বহন ক্ষমতা কম হওয়ায় জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। উয়-আদ্র নিরক্ষীয় অঞ্চলে, হিমশীতল মেরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশে গড়ে না ওঠায় জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে।


  • ভৌমজলের প্রাপ্যতা : পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে সর্বত্র জল পাওয়া যায় সেখানে পানীয় জল বা সেচের জন্য গভীর কূপ খননের প্রয়ােজন হয় না, সেইসব অঞ্চলে জনবসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। হরিয়ানার হিসার জেলায় বিস্তীর্ণ কৃষিভূমিতে এইরূপ বিক্ষিপ্ত জনবসতি লক্ষ করা যায়।


  • বন্যা : গ্রামের যেসব জায়গা বর্ষার সময় প্লাবিত হয় না, সেই সমস্ত জায়গায় লােকজন বিক্ষিপ্তভাবে বাস করে। প্লাবন ভূমিতে বন্যার সময় যেসব অঞ্চলে চাষবাস হয় না সেইসব অঞ্চলে ঋতুকালীন কৃষিকাজ হয় বলে অস্থায়ী বা স্থায়ী বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। গঙ্গা ও ঘর্ঘরা নদীর প্লাবন সমভূমিতে এই ধরনের বসতি লক্ষ করা যায়।


  • মৃত্তিকা : উর্বর ও অনুর্বর-উভয় প্রকার মৃত্তিকায় বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। অনুর্বর মৃত্তিকায় প্রতি একক জমিতে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ কম। ফলে কৃষিজমিতে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। আবার বিস্তীর্ণ উর্বর কৃষিভূমিতে যেখানে মানুষ—জমি অনুপাত কম, সেখানে ব্যাপক পদ্ধতিতে বিস্তৃর্ণ অঞ্চল জুড়ে চাষবাস হওয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জনবসতি গড়ে ওঠে। কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এইরূপ জনবসতি গড়ে উঠেছে।


(2) আর্থসামাজিক কারণ


  • কৃষিজমির প্রকৃতি : কৃষিজমি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত হলে, কৃষিতে প্রয়ােজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যায় না। এর পরিবর্তে, কৃষিকাজে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়ােজন হয়। তাই কৃষকেরা কৃষিজমিতেই বিক্ষিপ্তিভাবে জনবসতি গড়ে তােলে। পার্বত্য উপত্যকার ঢালে যেখানে চাষবাস হয়, সেখানে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে জনবসতি গড়ে ওঠে।


  • শান্তি ও নিরাপত্তা : দীর্ঘদিন শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় থাকলে মানুষ সেই অঞ্চলের উন্মুক্ত প্রান্তরে বসতি স্থাপন করে। সেচসেবিত এলাকায় যেখানে নিরাপত্তা অটুট, রােগের প্রকোপ নেই, সেইসব স্থানে বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠে।


  • জাতিভেদে : নিম্নবর্ণের কৃষিজীবীরা কৃষিজ ফসলের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে কৃষিজমিতেই কুয়াের পাশে বসতি স্থাপন করে বলে বসতিগুলি বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির হয়। তথাকথিত অস্পৃশ শ্রেণি, যারা সমাজের মূলস্রোত বহির্ভূত তারা সাধারণত গ্রামের শেষ প্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে বসতি স্থাপন করে।


  • পশুচারণ ও যাযাবর বৃত্তি : পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে পশুচারণ ও যাযাবর বৃত্তি লক্ষ করা যায়, সেইসব অঞ্চলে বসতি বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠে। স্তেপ, প্রেইরি প্রভৃতি তৃণভূমি এবং হিমালয়ের গাদ্দি ও রাজস্থানের বানজারাদের মধ্যে এই ধরনের বসতি লক্ষ করা যায়।


  • জাতিগত ও সামাজিক রীতিনীতি : জাতিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। অধিবাসীদের অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণেও বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠে। বন্যপশু ও চুরির হাত থেকে শস্য রক্ষার জন্য মধ্য ভারতের পাহাড়ি এলাকায় ভূমির ঢালের কেন্দ্রীয় স্থানে এই অঞ্চলের অধিবাসীরা তাদের বাসস্থান তৈরি করে। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার কারণে এরা একে অপরের প্রতি উদাসীন থাকে।

(3) অন্যান্য কারণ : বনভূমি পরিষ্কার করে তার প্রান্তভাগে এবং জলাভূমি উদ্ধার করে তার সীমান্তবর্তী এলাকায় অধিবাসীরা বিক্ষিপ্তভাবে জনবসতি গড়ে তোলে। গুজরাতের রাণ অঞ্চলে এবং চিলকা উপহ্রদের উত্তর-পূর্ব উপকূলের উদ্ধার করা জমির ওপর বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে উঠেছে। নতুন রেলপথ কিংবা সড়কপথ তৈরি হলে রেলস্টেশনের পাশে বা বাসস্টপগুলিতে দোকান, ধাবা প্রভৃতি গড়ে ওঠে। এইসব অঞ্চলে পরবর্তীকালে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে ওঠে। জাতীয় সড়ক NH-3 ও NH-6-এর দুই ধারে এই জাতীয় বিক্ষিপ্ত বসতি লক্ষ করা যায়।


গোষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি ও বিক্ষিপ্ত জনবসতির মধ্যে পার্থক্য

সংজ্ঞা:-
  • নির্দিষ্ট এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে যে বসতি গড়ে ওঠে তাকে গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বলে।

  • দূরে দূরে সংযােগহীন এবং সম্পর্কহীন ভাবে যে জনবসতি গড়ে ওঠে তাকে বিক্ষিপ্ত জনবসতি বলে।

অবস্থান:-
  • বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু ঢালযুক্ত সমতলভূমি, প্রায় সমতলভূমি, উর্বর মৃত্তিকা সমৃদ্ধ অঞ্চল এবং মনােরম জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে গড়ে উঠতে দেখা যায়।

  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিক ঢালযুক্ত পার্বত্য অঞ্চল, মালভূমি অঞ্চল এবং চরম জলবায়ুযুক্ত শুষ্ক, শুষ্কপ্রায় ও শীতল অঞ্চলে গড়ে উঠতে দেখা যায়।

বাড়ির মধ্যে দুরত্ব:-
  • বাড়িগুলির মধ্যে ব্যবধান কম, কাছাকাছি অবস্থান করে।

  • বাড়িগুলির মধ্যে ব্যবধান বেশি, দূরে দূরে অবস্থান করে।

নিরাপত্তা:-
  • বাড়িগুলি কাছাকাছি থাকায় নিরাপত্তার অভাব হয় না।

  • বাড়িগুলি দূরে দূরে থাকায় নিরাপত্তার অভাব থাকে।

পারস্পরিক সম্পর্ক:-
  • জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক যােগাযােগ খুব বেশি।

  • জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক যােগাযােগ খুব কম।

জীবিকা:-
  • এই প্রকার জনবসতির প্রধান জীবিকা চাষবাস।

  • এই জনবসতির প্রধান জীবিকা পশুচারণ ও কাঠ সংগ্রহ।



Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code