Ad Code

Ticker

7/recent/ticker-posts

মাটি : ওড়িশা

   




ওড়িশার মৃত্তিকা

মৃত্তিকা হল ভূপৃষ্ঠের শীর্ষ স্তর যেখানে পচা জৈব পদার্থের সাথে শিলা ও খনিজ পদার্থ মিশ্রিত হয়ে জল ধরে রাখার ক্ষমতা তৈরি হয়। এই মৃত্তিকাতেই গাছপালার বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।

মূলত ভূমিরূপ, গঠনগত উপাদান ও তাদের বৈশিষ্ট্য এবং জলবায়ুর ওপর ভিত্তি করে ওড়িশার মৃত্তিকাকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে, সেগুলি হল-

     ১. লাল মৃত্তিকা(Red Soil)

     ২. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা(Laterite and Lateritic Soil)

      ৩. মিশ্রিত লাল এবং হলুদ মৃত্তিকা(Mixed Red and Yellow Soil)

     ৪. উপকূলীয় লবণাক্ত পলি মৃত্তিকা(Costal Saline and Alluvial Soil)

     ৫. বদ্বীপীয় পলি মৃত্তিকা(Deltaic Alluvial Soil)

     ৬. কালো মৃত্তিকা(Black Soil)

     ৭. মিশ্রিত লাল ও কালো মৃত্তিকা(Mixed Red and Black Soil)

     ৮. বাদামী বনজ মৃত্তিকা(Brown Forest Soil)


১. লাল মৃত্তিকা(Red Soil) :—

              লাল মাটি প্রায় ৭.১৪ মিলিয়ন হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে এবং রাজ্যের সমস্ত মাটি গোষ্ঠীর মধ্যে সর্বাধিক অঞ্চল লাল মৃত্তিকার আওতাভুক্ত। এই মাটি কোরাপুট, রায়গাদা, নওরঙ্গপুর, মালকানগিরি, কেওনঝার, গাঞ্জাম, কালাহাণ্ডি, নুয়াপাডা, বলঙ্গির, ঢেঙ্কানাল এবং মায়ুরভঞ্জ জেলাগুলিতে এই লাল মৃত্তিকা দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্যঃ—

এই মৃত্তিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর গ্রথন পুরু, একক দানাবিশিষ্ট এবং অত্যন্ত ছিদ্রযুক্ত। এর জলধারণ ক্ষমতা খুব কম।

অতিরিক্ত পরিমানে আয়রন অক্সাইড এর উপস্থিতির জন্য এই মৃত্তিকার রঙ লাল হয়।

এই মৃত্তিকায় লবনাক্ততার অভাব রয়েছে, এবং এতে চুনযুক্ত কাঁকড় ও কার্বোনেট থাকে না।

এই মৃত্তিকা অম্ল প্রকৃতির হয়।

এই মৃত্তিকায় সাধারণত নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের ঘাটতি লক্ষ করা যায়।

এই মাটিতে খনিজ মৌল ও মলিবডেনাম এর মতো ক্ষুদ্র কনাগুলির অভাব দেখা যায়।

এই মৃত্তিকায় যেসব ফসল ভালো জন্মায় সেগুলি হল- ধান, রাগী, বাজরা, নাইজার তৈল বীজ, আলু,  বেগুন এবং ফল গাছ যেমন আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেপে, সবেদা ইত্যাদি।

২. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা(Laterite and Lateritic Soil):—

               ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা ০.৭০ মিলিয়ন হেক্টর অঞ্চল অধিকার করে রয়েছে। পুরী, খুরদা, নয়াগড়, কটক, ঢেঙ্কানল, কেওনঝড়, মায়ুরভঞ্জ এবং সম্বলপুর জেলায় এই মৃত্তিকার প্রাদুর্ভাব রয়েছে।

বৈশিষ্ট্যঃ— 

ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা মূলত আগ্নেয় শিলা কাঠামোর বৈশিষ্ট্যযুক্ত এবং স্বল্প পরিমানে ম্যাঙ্গানিজ, টাইটানিয়াম এবং কোয়ার্টজ সহ লোহা এবং অ্যালুমিনিয়ামের হাইড্রেট অক্সাইড সমৃদ্ধ।

অতিরিক্ত পরিমানে অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতির দরুন এই মৃত্তিকা সামান্য থেকে দৃঢ় মাত্রায় আম্লিক হয়ে থাকে।

এই মৃত্তিকার pH মাত্রা ৪.৫-৫.৮ এর মধ্যে থাকে।

এই মৃত্তিকার অনুপ্রবেশ ক্ষমতা খুব বেশি, এবং এতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ খুব কম থাকে।

এই প্রকার অম্ল মৃত্তিকায় চিনাবাদাম এবং ডাল খুব ভালো জন্মায়, এছাড়া আলু ও শাকসবজির ফলন ও এখানে লক্ষণীয়।   

উন্নত পদ্ধতিতে রোপণের দরুন এখানে ধান, রাগি, বাজরা, তিল এছারাও বিভিন্ন ফল যেমন আম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা এবং সবেদা খুব ভালো জন্মায়।

৩. মিশ্রিত লাল এবং হলুদ মৃত্তিকা(Mixed Red and Yellow Soil):—

                              এই মৃত্তিকা প্রায় ৫ মিলিয়ন হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে যা প্রায় রাজ্যের সমস্ত মৃত্তিকা গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বচ্চ। এই মৃত্তিকা রাজ্যের সম্বলপুর, বারগড়, দেওগড় এবং সুন্দরগড় জেলায় দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্যঃ—

এই ধরণের মাটিগুলি সূক্ষ গ্রথন যুক্ত এবং পরিমিতভাবে অগভীর হয়। 

এই মাটি লাল এবং হলুদাভ লাল বর্ণের হয়।

উচ্চভুমির মাটিগুলি মাঝারি অম্ল প্রকৃতির এবং নিন্মভূমির মাটি গুলি সামান্য অম্ল প্রকৃতির। নিন্মাঞ্চলের মাটিগুলি মূলত পলি সঞ্চয়ের ফলে গঠিত হয়েছে।

উচ্চভুমির মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন এবং ফসফরাসের পরিমাণ কম অন্যদিকে নিন্মভুমির মৃত্তিকাতে ফসফেটের পরিমাণ মাঝারি এবং পটাশিয়াম এর ভাগ খুব বেশি পরিমানে থাকে।

উচ্চভূমির মৃত্তিকা গুলি ধান, রাগি, আখ, আলু, বেগুন, টম্যাটো এবং পটল চাষের জন্য উপযুক্ত।  অন্যদিকে নিন্মভুমির মাটি ধান চাষের জন্য উপযুক্ত এছারাও এখানে দ্বিতীয় ফসল হিসাবে ডালের ফলন ভালো হয়ে থাকে। আম, পেয়ারা ও কলা জাতীয় ফল এই মৃত্তিকাই ভালো জন্মায়।

৪. উপকূলীয় লবণাক্ত পলি মৃত্তিকা(Costal Saline and Alluvial Soil)ঃ—

                         পলল মৃত্তিকায় দ্রবণীয় লবনের উপস্থিতির ফলে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। এই মৃত্তিকা রাজ্যের উপকূলীয় বলয়ের সাথে ৫-২৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে সরু অংশ বরাবর প্রসারিত। বালাসোর, ভদ্রক, জগতসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, পুরী, খুরদা ও গঞ্জমের দুর্গম অঞ্চলে এই লবণাক্ত পলি মৃত্তিকার প্রভাব লক্ষ করা যায়।

বৈশিষ্ট্যঃ— 

এই মৃত্তিকার লবনাক্ততা মূলত বালি, নুড়ি ও কাঁকড়ের সঞ্চয় এবং লবণাক্ত জোয়ারের জলের অনুপ্রবেশ এর কারনে হয়ে থাকে।

এই মৃত্তিকার pH গ্রীষ্মকালে ১০-৪০ ds/m এর পরিবাহিতা সহ ৬.০-৮.০ এর মধ্যে পরিবর্তিত হয়।

এই মৃত্তিকা নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এবং এতে মাঝারি থেকে কম মাত্রায় ফসফরাস থাকে।

এই মৃত্তিকায় বাইকার্বোনেট এবং কার্বোনেট খুব কম মাত্রায় থাকে।

ধান হল এই মৃত্তিকার প্রধান খারিফ শস্য। এছারাও এই মাটিতে লবন সহিষ্ণু রবি ফসল যেমন জাফরান, সরিষা, বার্লি, তিসি, মিষ্টি বীট, টম্যাটো, পালং শাক এবং কিছু শসা ভালো জন্মায়। কার্পাস ও এই মৃত্তিকার একটি সফল ফসল।

৫. বদ্বীপীয় পলি মৃত্তিকা(Deltaic Alluvial Soil)ঃ—

                       এই মৃত্তিকা ০.৬৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি জুড়ে রয়েছে। এই মৃত্তিকা বালাসোর, ভদ্রক, জাজপুর, কেন্দ্রপাড়া, জগৎসিংহপুর, কটক, পুরী, গাজাপতি, গঞ্জামৃত্রীকতা জেলার মহানাদি, ব্রাম্ভনি, বৈতরণী, সুবর্ণরেখা এবং রশিকুল্ল্যা নদীর বদ্বীপ অঞ্চলে দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্যঃ— 

এই মৃত্তিকার গঠন দানাদার বা মসৃণ ও হতে পারে।

এই মৃত্তিকার গঠনবিন্যাস পলল মাটি হওয়ার দরুন মাটি শুকনো হলে ফাটল ধরে এবং ভেজা অবস্থায় আঠালো হয়ে যায়।

এই ধরণের মাটির জল ধারন ক্ষমতা বেশি। ধীর প্রবেশযোগ্যতার কারণে এই মৃত্তিকায় জল নিকাশের অসুবিধা দেখা দেয়।

এই মৃত্তিকা সাধারণত উর্বর তবে কখনও কখনও নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের ঘাটতি লক্ষ করা যায়।

বদ্বীপীয় পলি মৃত্তিকা খারিফ শস্য ধান এবং রবি শস্য চিনাবাদাম, সরিষা, তিল, আলু এবং শাক সব্জির জন্য উপযুক্ত। এছাড়া অবশিষ্ট আর্দ্র মৃত্তিকায় চিনাবাদাম, মুগ ডাল এবং ছোলা খুব সফলভাবে জন্মায়।

৬. কালো মৃত্তিকা(Black Soil):—

                      এই মৃত্তিকা পুরী, গঞ্জাম, মালকানগিরি, কালাহান্দি, নুয়াপাডা, বলঙ্গির, সোনপুর, বৌদ্ধ, সমবলপুর, বারগড় এবং আঙ্গুল জেলাগুলির ০.৯ মিলিয়ন হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত।

বৈশিষ্ট্যঃ—

এই মৃত্তিকায় উপস্থিত টাইটোনিফেরাস ম্যাগনেটাইট, হিউমাস, বিটুমিনাস ইত্যাদির জন্য এই মাটির বর্ণ কালো হয়।

এই মাটি মূলত নিন্মভূমিতে মৌলিক শিলা আবহবিকারের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

এই মৃত্তিকার গ্রথন পুরু, এবং প্রায় ৩০ শতাংশেরও বেশি মাটির উপাদানযুক্ত।

এই মৃত্তিকা সর্বাধিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধারন করে স্ফীত হয়।

এই মৃত্তিকার ধীর প্রবেশযোগ্যতার কারণে ভূপৃষ্ঠে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়।

এই মৃত্তিকায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি তবে ফসফরাস, পটাসিয়াম, দস্তা এবং বোরনের ঘাটতি রয়েছে।

সালফার প্রয়োগের দ্বারা এই মৃত্তিকায় চীনাবাদাম ও সরিষা চাষ করা হয়। 
এই মাটি ধান, জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা, বেঙ্গল ছোলা, কুসুম, সরিষা এবং তুলা চাষের জন্য উপযুক্ত।

৭. মিশ্রিত লাল ও কালো মৃত্তিকা(Mixed Red and Black Soil)ঃ—

                                 এই মৃত্তিকা লাল এবং কালো উভয় মাটির সংশ্লেষ হিসাবে প্রাধান্য লাভ করে। যেখানে কৃষ্ণ মৃত্তিকা প্রাধান্যযুক্ত লাল মাটির সঙ্গে মিশ্রিত হয়। সমবলপুর, বরগড়, সোনপুর এবং বলঙ্গির পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে প্রায় 0.16 মিলিয়ন হেক্টর অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।

বৈশিষ্ট্যঃ—

এই মৃত্তিকা হালকা থেকে মাঝারি গ্রথন যুক্ত হয়।

কালো মৃত্তিকা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ এবং লাল মৃত্তিকা প্রভাবশালী লৌহ প্রদায়ী গঠনযুক্ত।

এই মৃত্তিকার উর্বরতার হার মাঝারি প্রকৃতির।

ধান চাষ যুক্ত নিন্ম জমিগুলিতে জিঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। ধান, ইক্ষু, ভুট্টা, রাগি, চিনাবাদাম, তিল এবং সব ধরণের সবজি ফসল পর্যাপ্ত সার প্রয়োগের সাথে সফলভাবে চাষ করা হয়।

৮. বাদামী বনজ মৃত্তিকা(Brown Forest Soil)ঃ—

                         বনভূমির সাথে জড়িত এই মাটি ফুলবানী, কাঁধামাল, রায়গাদা এবং গঞ্জাম ও নয়াগড়ের জেলাগুলিতে প্রায় ০.০7 মিলিয়ন হেক্টর অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।

বৈশিষ্ট্যঃ—

এগুলি বাদামী থেকে ধূসর বাদামি বর্ণের, হালকা গ্রথন যুক্ত এবং আম্লিক হয়।

এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ এবং নাইট্রোজেন জাতীয় উপাদান মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রায় থাকে।

এই মৃত্তিকায় ফসফরাস এবং পটাশ সামগ্রীগুলি মাঝারি মাত্রায় থাকে।

যথাযথ আর্দ্রতা সংরক্ষণের সাথে এই মাটি আদা, হলুদ এবং শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। ভুট্টা, গম ও সরিষাও এই মাটিতে ভালো জন্মায়। এছাড়া কাঁঠাল, আম, পেয়ারা এবং লেবু জাতীয় ফল এই মাটিতে হয়।

                   


         ওড়িশার কৃষি-জলবায়ু অঞ্চল এবং মৃত্তিকা

                            (Agro-Climatic Zone Of Orissa and Soil)

নং

(Sl.no)

কৃষি জলবায়ু অঞ্চল

(Agro-climatic zone)

প্রধান জেলা

(Main District)

মৃত্তিকা গোষ্ঠী (Soil Group)

উত্তর পশ্চিমের মালভূমি

(North western plateau)

সুন্দরগড়

(Sundargarh)

মিশ্রিত লাল এবং হলুদ

(Mixed red and yellow)

উত্তর কেন্দ্রীয় মালভূমি

(North central plateau)

কেওনঝার

(Keonjhar)

লাল

(Red)

উত্তর পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

(North eastern coastal plain)

বালাসোর

(Balasore)

উপকূলীয় পলল

(Coastal alluvial)

পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি

(East and south eastern coastal plain)

পুরী এবং কটক

(Puri and cuttack)

বদ্বীপীয় পলল এবং

ল্যাটেরাইট

(Deltaic alluvial & laterite)

উত্তর পূর্ব ঘাট

(North eastern ghat)

ফুলবেন

(phulbane)

লাল দোআঁশ এবং বাদামী

বন মাটি

(Red loam & brown forest)

পূর্ব ঘাট উঁচুভূমি

(Eastern ghat highland)

কোরাপুট

(Koraput)

লাল এবং ল্যাটেরাইট
(Red and laterite)

দক্ষিণ পূর্ব ঘাট

(South eastern ghat)

কোরাপুট

(Koraput)

লাল

(Red)

পশ্চিমী ঢাল

(Western undulating)

কালাহান্দি

(Kalahandi)

লাল এবং কালো

(Red and black)

পশ্চিম কেন্দ্রীয় সমতল

(West central table)

সমবলপুর, বলঙ্গির

(Sambalpur Bolngir)

মিশ্রিত লাল এবং কালো

(Mixed red and black)

১০

মধ্যম কেন্দ্রীয় সমতল

(Mid central table land)

ঢেঙ্কানাল

(Dhenkanal)

লাল এবং ল্যাটেরাইট

(Red and laterite)

 


Reactions

Post a Comment

0 Comments

Ad Code